বিচারহীন ৩৬৫ দিন!— এই তীব্র ব্যথা আর ক্ষোভের স্লোগানেই আজ জেগে উঠল মেদিনীপুর শহর। গত এক বছর ধরে অভয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিভিন্ন বামপন্থী গণসংগঠন। “আমরা চুপ থাকবো না, আমরা জবাব চাই” এবং “বিচারহীন অভয়াবর্ষ” — এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের রাস্তাঘাট।
শনিবার সন্ধ্যায়, শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে শুরু হয় এক বিশাল মশাল মিছিল। হাতে হাতে জ্বলন্ত মশাল, পোস্টার, ব্যানার— যেখানে অভয়ার ছবি আর ন্যায়ের দাবি লেখা— আন্দোলনকারীরা একত্রিত হন। রক্তলাল মশালের আলোয় ভরে ওঠে মেদিনীপুরের অন্ধকার রাত। মিছিল শহরের প্রধান প্রধান পথ পরিক্রমা করে, প্রতিটি মোড়ে থেমে প্রতিবাদী বক্তব্য রাখা হয়।
আয়োজকদের দাবি, অভয়ার হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ অপরাধ নয়— এটি নারীর প্রতি বর্বরতা এবং বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। ঘটনার পর এক বছর কেটে গেলেও দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। তদন্ত প্রক্রিয়া বারবার বিলম্বিত হয়েছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা বলে মনে করছেন তাঁরা।
এক বামপন্থী গণসংগঠনের মুখপাত্র জানান, “আমরা শুধু অভয়ার জন্য নয়, সমস্ত নারীর জন্য নিরাপত্তা এবং ন্যায় চাই। আজ যদি আমরা চুপ থাকি, আগামীকাল আরও অনেক অভয়া এই সমাজে বিচারহীনতার শিকার হবে।” তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলন থেমে থাকবে না— আগামী দিনে জেলা ও রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর কর্মসূচি নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এই মশাল মিছিলের প্রভাব গভীর। অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে যোগ দেন এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে কণ্ঠ মেলান। ছাত্র-যুব, শ্রমিক, মহিলা— নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হন। মিছিলে উপস্থিত এক ছাত্রীর কথায়, “আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি কারণ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ না খুললে আমরা নিজেরাও একদিন শিকার হব।”
শহরের প্রতিটি গলিপথে আজ প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। মশালের আগুন যেন শুধু আলোর প্রতীক নয়, বরং ক্ষোভ, দৃঢ়তা আর ন্যায়ের লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— যতদিন না অভয়ার হত্যাকারীরা আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছে, ততদিন এই লড়াই চলবে। আগামী দিনে আরও বৃহত্তর মিছিল, ধর্না ও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হবে।
আজকের এই মশাল মিছিল কেবল একজন অভয়ার জন্য ন্যায়ের দাবি নয়— এটি বিচারহীনতার অন্ধকারের বিরুদ্ধে এক সামষ্টিক অঙ্গীকার, যা মেদিনীপুর থেকেই সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।