কলকাতা, ৩০ সেপ্টেম্বর:
১৯৩৮ সালের এই দিনে অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল মিউনিখ চুক্তি, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তুষ্টিকরণের (Appeasement) নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইতালি যৌথভাবে নাৎসি জার্মানিকে চেকোস্লোভাকিয়ার একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চল সুদেটেনল্যান্ড দখল করার অনুমতি দেয়। চেকোস্লোভাকিয়ার মতামত ছাড়াই, অ্যাডলফ হিটলারের যুদ্ধের হুমকির মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
চুক্তির মূল বিষয় ও উদ্দেশ্য
মিউনিখ চুক্তিতে জার্মানির পক্ষে হিটলার, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেইন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ডালাদিয়ের এবং ইতালির নেতা বেনিটো মুসোলিনি স্বাক্ষর করেন। যুদ্ধ এড়ানোর আশায় চেম্বারলেইন এবং ডালাদিয়ের হিটলারের দাবি মেনে নেন, চেম্বারলেইন ফিরে এসে ঘোষণা করেন যে তারা "আমাদের সময়ের জন্য শান্তি" (peace for our time) নিশ্চিত করেছেন।
ব্রিটিশ ও ফরাসি চাপের মুখে চেকোস্লোভাক সরকারকে একা যুদ্ধ করার বা অঞ্চল সমর্পণ করার মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়েছিল এবং তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। চুক্তির পরপরই জার্মান সেনাবাহিনী সুদেটেনল্যান্ড দখল শুরু করে।
চেকোস্লোভাকিয়ার উপর তাৎক্ষণিক প্রভাব
মিউনিখ চুক্তির ফলে চেকোস্লোভাকিয়ার উপর গুরুতর ও অস্থিতিশীল প্রভাব পড়ে:
বিশাল অঞ্চলের ক্ষতি: তারা সুদেটেনল্যান্ড সমর্পণ করতে বাধ্য হয়, যা ছিল জার্মানির বিরুদ্ধে দুর্গে সুরক্ষিত এবং প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন জাতিগত জার্মান মানুষের বাসস্থান।
অর্থনৈতিক ও সামরিক দুর্বলতা: এই অঞ্চল হারানোর ফলে দেশের প্রায় ৭০% ইস্পাত এবং বৈদ্যুতিক শিল্প হাতছাড়া হয়ে যায়। সুরক্ষিত সীমান্ত ঘাঁটিগুলো চলে যাওয়ায় দেশটি সামরিকভাবে সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি: মিত্র বলে বিবেচিত ব্রিটেন ও ফ্রান্সের এমন পদক্ষেপে চেকোস্লোভাকিয়ার জনগণ গভীর বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতিতে ভোগে। এটি সে দেশে "মিউনিখ বিশ্বাসঘাতকতা" নামে পরিচিত এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব হারানোর সূচনা হিসেবে চিহ্নিত।
পরবর্তী আগ্রাসন ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত
আজ বিশ্বজুড়ে মিউনিখ চুক্তিকে তুষ্টিকরণের একটি ব্যর্থ নীতি হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমা শক্তির এই নতি স্বীকার নাৎসি জার্মানির সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে সরাসরি উৎসাহিত করেছিল।
হিটলার বুঝতে পারেন যে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর বাধা আসবে না। চুক্তির কয়েক মাসের মধ্যেই হিটলার তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন এবং ১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে চেকোস্লোভাকিয়ার বাকি অংশ দখল করে নেন, দেশটির স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে দেন। এই দ্রুত সাফল্যের পর হিটলারের আগ্রাসী মনোভাব আরও বাড়ে এবং ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। মিউনিখ চুক্তি কার্যত যুদ্ধ এড়াতে ব্যর্থ হয় এবং যুদ্ধের পথ প্রশস্ত করে দেয়।