উত্তরবঙ্গ: প্রকৃতির ভয়াল থাবায় যখন উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন, তখন ত্রাণ নিয়েও তুঙ্গে উঠেছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। জীবন-জীবিকা হারিয়ে, খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বন্যাকবলিত মানুষ যখন একমুঠো ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন, ঠিক তখনই জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় দেখা গেল চরম জনরোষের এক ভয়ঙ্কর চিত্র।
৬ অক্টোবর, মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে নাগরাকাটার বামনডাঙা এলাকায় পৌঁছলে তাঁদের ঘিরে ধরে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ত্রাণ বন্টনে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অব্যবস্থার অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। চারিদিকে শুধু ভেসে আসছিল 'গো-ব্যাক' স্লোগান আর চরম বঞ্চনার কান্না।
মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ক্ষিপ্ত জনতা লাঠি, জুতো, পাথর নিয়ে চড়াও হয় জনপ্রতিনিধিদের কনভয়ের উপর। ভিড়ের আক্রমণে সাংসদ খগেন মুর্মু গুরুতর আহত হন। রক্তে ভেসে যায় তাঁর মুখ। তাঁর কপাল ও চোখের কাছে মারাত্মক আঘাত লাগে। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকেও ধাক্কা মারা হয়, তাঁর কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়। নেতাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় নির্বিচারে। ভাঙা কাঁচ আর পাথরের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় গোটা এলাকা।
রক্তাক্ত অবস্থায় কোনওমতে সাংসদ খগেন মুর্মুকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা রাজ্য রাজনীতি।
বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এটি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের পরিকল্পিত হামলা। এই হামলার মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের ত্রাণ কাজকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, এটা বন্যাকবলিত মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যেখানে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ত্রাণের নামে দলবাজি আর দুর্নীতির অভিযোগের ভিড়ে অসহায় মানুষের চোখের জল মিশে গেল এই রক্তক্ষয়ী ঘটনার সঙ্গে। একদিকে প্রকৃতির দুর্যোগ, অন্যদিকে ত্রাণের অভাবে মানুষের এই ভয়ঙ্কর ক্ষোভ— সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি এখন চরম অস্থির। এই হামলার ঘটনা প্রমাণ করে দিল, সাধারণ মানুষের দুর্দশা এখন সব রাজনৈতিক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে।