দুর্গাপুর, পশ্চিমবঙ্গ: লজ্জাজনক ও পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের দাবিতে দুর্গাপুরের রাজপথ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এবং নারী সুরক্ষার দাবিতে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) বা সিপিআই(এম) এর ডাকে এক বিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মিছিলে "দুর্গাপুরের জন্য বিচার" স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা শিল্পাঞ্চল।
শুক্রবার রাতে আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনা সামনে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় এবং ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এই পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত সিপিআই(এম)-এর এই মিছিলে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে চন্ডীদাস বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই মিছিলে পা মেলান বহু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও পুরুষেরা। হাতে লাল পতাকা এবং চোখে বিচারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা গর্জে ওঠেন।
মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সিপিআই(এম) নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি এবং দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি। মীনাক্ষী মুখার্জি তার বক্তব্যে বলেন, "এই ঘটনা শুধু দুর্গাপুরের লজ্জা নয়, সমগ্র বাংলার লজ্জা। আর জি কর থেকে দুর্গাপুর, নারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আমরা চুপ করে থাকব না।" তিনি অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
মিছিল যত এগোতে থাকে, ততই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষও এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানান। মিছিলে অংশগ্রহণকারী এক বৃদ্ধা বলেন, "আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? আর কতদিন আমরা এই ভয় নিয়ে বাঁচব?"
এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবস্থাকে আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।আর জি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্গাপুরের এই ঘটনায় নারী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
বিরোধী দলগুলি, বিশেষত বিজেপি এবং কংগ্রেসও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এবং রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।তাদের মতে, এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে রাজ্যে নারীরা সুরক্ষিত নন।
পুলিশ এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।[1] কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, সমস্ত দোষী ধরা না পড়া পর্যন্ত এবং তাদের কঠোর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। দুর্গাপুরের রাজপথে এদিনের মিছিল ছিল সেই প্রতিবাদেরই এক জ্বলন্ত প্রতিফলন, যা এক বাক্যে শুধু সুবিচারের দাবি জানিয়েছে।