
২৫ অক্টোবর, ২০২৫
আয়ারল্যান্ডের মাটি আজ এক নতুন বিপ্লবী বার্তা নিয়ে জেগে উঠেছে! ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখের সঙ্গী, বামপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্যাথরিন কনোলি (৬৮), এক ঐতিহাসিক জনরায় দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিজয় কেবল ভোটের হিসাব নয়—এটি লক্ষ লক্ষ আইরিশ হৃদয়ের এক গভীর আবেগ ও সংহতির বহিঃপ্রকাশ। ২০২৫ সালের এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যেন আয়ারল্যান্ডের বাম-রাজনীতি এবং ফিলিস্তিন-পন্থী আন্দোলনের জন্য শতাব্দীর আকাঙ্ক্ষার চূড়ান্ত জয় ।
দেশজুড়ে জনগণ তাদের সমস্ত প্রত্যাশা ঢেলে দিয়েছে এই নির্ভীক নেত্রীর দিকে। তিনি পেয়েছেন প্রায় ৬৪–৬৫% জাতীয় ভোট, যা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী Fine Gael-এর হেদার হামফ্রিজকে (২৮–২৯%) এক বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে । এই জয়ের ব্যবধানকে আইরিশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ইতিহাসে কিংবদন্তী ইমোন ডি ভ্যালেরার রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাওয়া এক অবিশ্বাস্য গণঅভ্যুত্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে ।
মানবতার পক্ষে দীপ্ত শপথ
ক্যাথরিন কনোলি প্রথম দিন থেকেই ছিলেন নিপীড়িত ফিলিস্তিনের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ কণ্ঠস্বর। প্রতিটি বক্তৃতায় তার চোখে ছিল গাজার জন্য সহানুভূতি, আর কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা। তিনি বারবার "ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযান"-এর তীব্র নিন্দা করেছেন এবং অস্ত্র বিক্রয় ও নীরবতার মাধ্যমে এই নৃশংসতাকে সমর্থন করার জন্য পশ্চিমা সরকারগুলোর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন ।
নির্বাচনী প্রচারণায় তার একটি কথাই আইরিশ জনগণের হৃদয় স্পর্শ করেছিল—তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, আয়ারল্যান্ডকে অবশ্যই “আমার দেহে যতক্ষণ শ্বাস থাকবে, আমি ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি জানাবো” । এই কথাগুলো ছিল যেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি আইরিশদের ঐতিহাসিক উপনিবেশ-বিরোধী আবেগের প্রতিধ্বনি। গত মে মাসে, ইসরায়েলের "যুদ্ধ বন্ড" অনুমোদনের জন্য যখন তিনি আইরিশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে ছিল গভীর যন্ত্রণা ও ন্যায়বিচারের আহ্বান ।
তাঁর এই আপসহীন অবস্থান তাকে সাধারণ মানুষের কাছে এক আশার আলো এনে দিয়েছে, তবে এই বিজয় ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং ব্রাসেলসের ক্ষমতার অলিন্দে অস্বস্তি তৈরি করবে, কারণ মানবতা ও ন্যায়বিচার সেখানে প্রায়শই উপেক্ষিত হয় ।
বামপন্থী ঢেউ: কেন্দ্রবাদের প্রতি ঘৃণা
কনোলি সামাজিক ন্যায়বিচার, দেশের নিরপেক্ষতা এবং শান্তি কূটনীতির মশাল হাতে এগিয়েছেন । সিন ফেইন থেকে গ্রিন পার্টি পর্যন্ত বিস্তৃত বাম-ঘেঁষা দলগুলোর একজোট সমর্থন ছিল তাঁর সঙ্গে ।
যদিও নির্বাচনটি হয়েছে কম ভোটার উপস্থিতি (প্রায় ৪০%) এবং রেকর্ড সংখ্যক ১৩% নষ্ট ব্যালট দিয়ে । কিন্তু এই ফল স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত কেন্দ্রবাদী দলগুলোর উপর হতাশ। কনোলির এই জয় আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিতে কেন্দ্রবাদের একাধিপত্যকে অস্বীকার এবং ফিলিস্তিনের মতো উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামের প্রতি আইরিশ সংহতির ঐতিহাসিক বন্ধনকে পুনঃনিশ্চিত করার প্রতীক ।
মাইকেল ডি হিগিন্সের পরে দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্যাথরিন কনোলির শপথ গ্রহণ আইরিশ জনগণের একটি ঐতিহাসিক ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে—যেখানে বিশ্বজুড়ে মানবিকতার জয়গান গাওয়া হবে, আর ক্ষমতা নয়, হৃদয়ই হবে পররাষ্ট্রনীতির চালিকাশক্তি ।