প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জুবিন গার্গের আকস্মিক মৃত্যুতে যখন গোটা দেশ শোকস্তব্ধ, তখন এক নতুন তথ্য তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক রিপোর্টে তাঁর মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে মনে করা হলেও, সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গার্গের একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার সেই ধারণাকে আমূল বদলে দিয়েছে। তিনি এমন কিছু গুরুতর এবং উদ্বেগজনক প্রশ্ন তুলেছেন, যা ঘটনাটিকে এক নতুন মোড় দিয়েছে এবং জুবিনের মৃত্যুতে 'অবহেলায় হত্যা'-র দিকে ইঙ্গিত করেছে।
ইয়ট ভ্রমণে চরম অবহেলা: লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই সাঁতার
গরিমা গার্গের অভিযোগ অনুযায়ী, জুবিনের মৃত্যু ছিল মর্মান্তিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের শৃঙ্খলের ফল। সিঙ্গাপুরে নির্ধারিত অনুষ্ঠানের আগের দিন তাঁকে একটি ইয়ট ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে গরিমা জানতে পারেন যে, জুবিনকে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই জলে নামতে ও সাঁতার কাটতে দেওয়া হয়।
গরিমা গভীর উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেছেন যে, একবার সাঁতার কাটার পরেই জুবিনকে অত্যন্ত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল এবং তিনি সাহায্যের জন্য তীরে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। তা সত্ত্বেও, তাঁকে আবার জলে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, জুবিন হয়তো এই পিকনিকের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই জানতেন না।
এই ঘটনায় তাঁর ম্যানেজার, দলের সদস্য এবং উপস্থিত আসাম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের চরম উদাসীনতা প্রকাশ পেয়েছে। গরিমার নিজের কথায়, "যখন উনি ক্লান্ত দেখাচ্ছিলেন এবং সাহায্যের জন্য চেষ্টা করছিলেন, তখন তারা উল্লাস করছিল... কেন তাঁর যত্ন নেওয়া হয়নি যখন তাঁর ম্যানেজার এবং দলের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন?"
গুরুতর চিকিৎসা অবহেলা: জীবনদায়ী ওষুধ কি দেওয়া হয়েছিল?
এই অবহেলার অভিযোগ শুধুমাত্র শারীরিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা জুবিনের পরিচিত এবং গুরুতর স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকেও ঘিরে ছিল। গরিমা প্রকাশ করেছেন যে, জুবিন গার্গের এর আগেও খিঁচুনি (seizure) হওয়ার ইতিহাস ছিল এবং তিনি প্রতিদিন "লেভিপিল" (Levipil) নামক একটি জীবনদায়ী ওষুধ নিতেন।
তিনি গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনে তাঁকে প্রয়োজনীয় ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল কি না। তিনি আরও বলেন, সেই ভ্রমণের সময় কোনো যথাযথ নিরাপত্তা বা চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল, যা অবহেলার অভিযোগকে আরও দৃঢ় করে।
তথ্যের নিস্তব্ধ প্রাচীর: পরিবারকে অন্ধকারে রাখা হয়
পরিবারকে যখন প্রাথমিক খবর দেওয়া হয়, তখন থেকেই তথ্যের মধ্যে এক বিভ্রান্তিকর এবং সন্দেহজনক অসঙ্গতি ছিল। তাঁদের জানানো হয় যে জুবিনকে সিপিআর (CPR) দেওয়া হচ্ছে। গরিমা বলেন, এই তথ্যটি তাঁকে হতবাক করে দেয়, কারণ জুবিনের কখনও হৃদরোগের কোনো সমস্যা ছিল না; তাঁর স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল খিঁচুনি সংক্রান্ত।
এর পর থেকে তাঁরা মরিয়া হয়ে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। গরিমা জানান, তিনি এবং তাঁর ননদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যেকের সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনো উত্তর পাননি। জুবিনের অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের কোনো ছবি বা ভিডিও পাঠানো হয়নি, যা পরিবারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দেয়।
ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষা
জুবিন গার্গের মৃত্যু এখন আর কেবল একটি দুঃখজনক ঘটনা নয়; এটি তাঁর স্ত্রীর তোলা অবহেলার গুরুতর অভিযোগ এবং একাধিক উত্তরহীন প্রশ্নে ঘেরা এক রহস্য। গরিমা সাইকিয়া গার্গ দেশের আইনি ব্যবস্থার উপর তাঁর আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং SIT-এর চলমান তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন।
এই ঘটনা আমাদের এক গভীর প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়: একজন শিল্পীর প্রতি জনগণের ভালোবাসা যেমন অসীম, তাঁর চারপাশের মানুষদের দায়িত্বও কি ততটাই গভীর হওয়া উচিত নয়?