নাগরাকাটা, ৬ অক্টোবর, ২০২৫: উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ধস পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় আক্রমণের মুখে পড়লেন মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বামনডাঙা এলাকায় তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় এবং বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই ঘটনায় সাংসদ খগেন মুর্মুর মাথা ফেটে যায় এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও আহত হন। এই হামলার পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি, যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে 'জনরোষ' বলে ব্যাখ্যা করেছে।
তবে এই ঘটনার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি উঠেছে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়েই। নাগরাকাটার মতো দুর্যোগকবলিত এলাকায় শিলিগুড়ি এবং উত্তর মালদার সাংসদ-বিধায়কদের কেন যেতে হলো?
এলাকার জনপ্রতিনিধি, অর্থাৎ নাগরাকাটার বিধায়ক পূণা ভেঙ্গরা (বিজেপি) এবং জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মনোজ টিগ্গা (বিজেপি), তাঁরা কেন প্রথম সারিতে উপস্থিত ছিলেন না?
বিজেপি সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য বিজেপি সভাপতি ডঃ শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে খগেন মুর্মু ও শঙ্কর ঘোষসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা একটি প্রতিনিধি দল হিসেবে নাগরাকাটা গিয়েছিলেন। বিধায়ক পূণা ভেঙ্গরা এবং সাংসদ মনোজ টিগ্গা ওই সময় ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন কি না, বা তাঁরা নিজেরা এলাকা পরিদর্শনে আগে গিয়েছিলেন কি না— সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য না পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজের এলাকার নির্বাচিত বিধায়ক ও সাংসদকে দুর্যোগের সময় সবার আগে মানুষের পাশে দেখতে চাওয়া স্বাভাবিক। সেই জায়গায় বাইরের এলাকার সাংসদ-বিধায়কদের যেতে হওয়ায় এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি বিজেপির অভ্যন্তরেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে যে, স্থানীয় নেতৃত্ব কি মানুষের কাছে পৌঁছতে বা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন? নাকি দলীয় কৌশলগত কারণেই এই প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হয়েছিল?
অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, স্থানীয় মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন কারণ ত্রাণ নিয়ে নয়, বরং দলীয় প্রচার ও ছবি তোলার জন্য ওই বিজেপি নেতারা কনভয় নিয়ে এসেছিলেন। যদি স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদ সময়মতো এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে এলাকায় যেতেন, তাহলে হয়তো এই জনরোষের পরিস্থিতি তৈরি হতো না— এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উত্তরবঙ্গ বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কদের ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও আঙুল তুলেছে।