জার্মানির জাতীয় ঐক্য দিবস (German Unity Day - Tag der Deutschen Einheit) প্রতি বছর ৩রা অক্টোবর পালিত হয়। ১৯৯০ সালের এই দিনে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির আনুষ্ঠানিক পুনঃএকত্রীকরণ ঘটে, যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটির দীর্ঘ বিভাজন শেষ হয়। ২০২৫ সালে এই ঐক্যের ৩৫তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে, যেখানে সাআরব্রুকেন (Saarbrücken) শহরে প্রধান রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তবে, এই জাতীয় উৎসবের আবহের মধ্যেও পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক সংহতির অভাব নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।
পূর্ব জার্মানির নস্টালজিয়া: অস্টালজি কেন এখনও প্রাসঙ্গিক?
পুনঃএকত্রীকরণের এত বছর পরও পূর্ব জার্মানির মানুষের মধ্যে অস্টালজি (Ostalgie)—অর্থাৎ 'পূর্বের প্রতি নস্টালজিয়া'—একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সত্য। এই অনুভূতি সাবেক সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানি (GDR)-এর প্রতি প্রেম নয়, বরং পুঁজিবাদী পশ্চিমী ব্যবস্থার চাপ এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ:
নিরাপত্তার প্রতি আকাঙ্ক্ষা: পূর্ব জার্মানির নাগরিকরা মূলত সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং নিশ্চিত কর্মসংস্থানকে মিস করেন। জিডিআর-এর সময়ে চাকরি, আবাসন, এবং শিশুদের জন্য ব্যাপক সরকারি পরিচর্যা ছিল, যা পশ্চিমী বাজারের অনিশ্চয়তার মুখে হারিয়ে গেছে।
সাংস্কৃতিক পরিচয়: বহু 'পূর্ব জার্মান' (Ossi) মনে করেন, ঐক্য প্রক্রিয়ায় পশ্চিম জার্মানির সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তাঁরা 'দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক'-এ পরিণত হয়েছেন। অস্টালজি তাঁদের হারানো সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ধরে রাখার এক প্রচেষ্টা।
অর্থনৈতিক হতাশা: অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জিডিপি এবং উৎপাদনশীলতার দিক থেকে পূর্ব জার্মানি এখনও পশ্চিমের তুলনায় ২০-২৫% পিছিয়ে আছে। এই অর্থনৈতিক বৈষম্যই হতাশাকে উসকে দিচ্ছে এবং ডানপন্থী দলগুলির প্রতি সমর্থন বাড়াচ্ছে।
ঐক্য কি এখনও অপূর্ণ?
২০২৫ সালের নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র ৩৫% জার্মান মনে করেন পূর্ব ও পশ্চিম 'largely merged' বা প্রায় পুরোপুরি এক হয়ে গেছে। পূর্ব জার্মানির ৭৫% মানুষ মনে করেন যে দেশটি ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিভেদ: পূর্ব জার্মানিতে প্রথাগত দলগুলির প্রতি আস্থা কম, যা প্রমাণ করে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায় এখনও কার্যকর সংহতি আসেনি।
সাংস্কৃতিক সংঘাত: বয়স্ক প্রজন্ম হারানো সামাজিক সুরক্ষা ও ব্যবস্থাকে স্মরণ করে, আর নতুন প্রজন্ম পশ্চিমা সংস্কৃতির আধিপত্যে নিজেদের 'পূর্ব জার্মান' পরিচয় রক্ষা করার চেষ্টা করে।
অতএব, জার্মান ঐক্য দিবস একদিকে যেমন শান্তি, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বিজয়কে উদ্যাপন করে, তেমনি অন্যদিকে এটি মনে করিয়ে দেয় যে একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঐক্যসাধন হলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংহতি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আজও সম্পূর্ণ হয়নি।