" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory আকাশের সিংহাসনে মানুষ: রাইট ফ্লায়ার থ্রি-এর ঐতিহাসিক উড়ান (১৯০৫) A Revolution in the Sky: The Historic Flight of the Wright Flyer III on October 5, 1905 //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

আকাশের সিংহাসনে মানুষ: রাইট ফ্লায়ার থ্রি-এর ঐতিহাসিক উড়ান (১৯০৫) A Revolution in the Sky: The Historic Flight of the Wright Flyer III on October 5, 1905

 



৫ অক্টোবর, ১৯০৫। ওহাইও, হফম্যান প্রেইরি। মানুষের চিরন্তন আকাশে ওড়ার স্বপ্ন এক নতুন, বাস্তব ভিত্তি পেল। এই দিনে উইলবার রাইট (Wilbur Wright) তাঁদের নির্মিত তৃতীয় চালিত বিমান, রাইট ফ্লায়ার থ্রি (Wright Flyer III), নিয়ে এক অভূতপূর্ব রেকর্ড গড়লেন, যা বিমান চালনার ইতিহাসে 'প্রথম ব্যবহারিক বিমান' যুগের সূচনা করল।1 এই একটি উড়ানই প্রমাণ করে দিল যে, নিয়ন্ত্রিত (Controlled), শক্তিসম্পন্ন (Powered), এবং দীর্ঘস্থায়ী (Sustained) বিমান তৈরি করা সম্ভব।

বিশ্বরেকর্ড এবং নতুন যুগের সূচনা


ঐতিহাসিক এই উড়ানে উইলবার রাইট একটানা ৩৯ মিনিট ২৩ সেকেন্ড আকাশে ভেসে ছিলেন এবং ২৪ মাইলেরও বেশি (প্রায় ৩৯ কিলোমিটার) পথ অতিক্রম করেন। এই দীর্ঘ অবিরাম চক্রাকার উড়ানটি ছিল ১৯০৩ ও ১৯০৪ সালে তাঁদের সমস্ত উড়ানের মোট দূরত্বের চেয়েও বেশি। এই ঘটনা বিশ্বকে দেখাল—মানুষ শুধু ক্ষণিকের জন্য উড়তে পারে না, বরং সে আকাশে নিজের ইচ্ছামতো পথ চলতে এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।

এর আগে ১৯০৩ সালে কিটি হক-এ প্রথম সফল উড়ান (Flyer I) এবং ১৯০৪ সালে Flyer II পরীক্ষামূলক উড়ান ছিল, যা বিমান চালনার সম্ভাবনা প্রমাণ করেছিল।3 কিন্তু এই বিমানগুলিতে গুরুতর স্থায়িত্বের (stability) সমস্যা ছিল, যার ফলে বিমানগুলি প্রায়শই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হত এবং মসৃণভাবে অবতরণ অসম্ভব ছিল। এই কারণে, সেই উড়ানগুলি ছিল সংক্ষিপ্ত এবং অনির্ভরযোগ্য। কিন্তু ১৯০৫ সালের ফ্লায়ার থ্রি সেই সমস্ত দুর্বলতা দূর করে এক নির্ভরযোগ্য যান হিসেবে আবির্ভূত হলো।



বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও নকশার উন্নতি

১৯০৫ সালের ফ্লাইং সিজনের শুরুতে, ফ্লায়ার থ্রি দেখতে পূর্ববর্তী মডেলগুলির মতোই ছিল এবং এটির কার্যকারিতা নিয়েও একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছিল। বিশেষ করে, বিমানের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ (pitch instability) নিয়ে গুরুতর অসুবিধা ছিল।4 ১৪ জুলাই, ১৯০৫-এ একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার পর ওরভিল রাইট অল্পের জন্য রক্ষা পান। এই দুর্ঘটনাই রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কে বিমানটির নকশায় আমূল পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে:

১. নিয়ন্ত্রণ পৃষ্ঠের পরিবর্ধন: তারা সামনের এলিভেটর (উচ্চতা নিয়ন্ত্রক) এবং পিছনের রাডার (দিক নিয়ন্ত্রক)-এর আকার প্রায় দ্বিগুণ করে দেন এবং সেগুলিকে ডানা থেকে প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে স্থাপন করেন।5 এর ফলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও কার্যকর ও প্রতিক্রিয়াশীল হয়, যা পাইলটের জন্য বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ করে তোলে।

২. স্থায়িত্ব বৃদ্ধি: বিমানের পাশ দিয়ে পিছলে যাওয়ার প্রবণতা (sideslip) কমাতে তারা ফ্লায়ার থ্রি-এর ডানাগুলিকে সামান্য ডাইহেড্রাল (dihedral - সামান্য ঊর্ধ্বমুখী কোণ) প্রদান করেন।

৩. নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা: ১৯০২ গ্লাইডার, ১৯০৩ এবং ১৯০৪ মডেলের মতো উইং ওয়ার্পিং (roll) এবং রাডার (yaw) নিয়ন্ত্রণকে একসঙ্গে যুক্ত না রেখে, ফ্লায়ার থ্রি-তে সেগুলিকে আলাদা করে দেওয়া হয়।7 এই নতুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আধুনিক বিমানের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে।

এই নকশা পরিবর্তনের ফলেই ফ্লায়ার থ্রি পূর্ববর্তী মডেলগুলির গুরুতর উচ্চতাগত অস্থিরতা এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার প্রবণতা কাটিয়ে ওঠে।




আধুনিক বিমান চালনার ভিত্তি

পরিবর্তিত ফ্লায়ার থ্রি-এর সঙ্গে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় সেপ্টেম্বর থেকে উড়ান পরীক্ষা শুরু করেন এবং দ্রুতই এর কার্যকারিতায় ব্যাপক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। উড়ানগুলি ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হতে শুরু করে, যেখানে পাইলট নিরাপদভাবে উড্ডয়ন স্থান থেকে ফিরে এসে মসৃণ অবতরণ করতে সক্ষম হন। ৫ অক্টোবরের ঐতিহাসিক উড়ানটি এই ধারাবাহিক সফলতার চূড়ান্ত প্রমাণ।

এর ফলে, রাইট ফ্লায়ার থ্রি হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর স্থির-ডানাযুক্ত বিমান। এই সাফল্যের পর রাইট ভ্রাতৃদ্বয় সামরিক ব্যবহারের জন্য এই প্রথম ব্যবহারিক বিমানটি বিক্রির লক্ষ্যে মার্কিন সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠান।

এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেবল একটি বিশ্বরেকর্ডই ছিল না, বরং এটি মানুষের আকাশজয়ের যাত্রায় একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করেছিল। রাইট ফ্লায়ার থ্রি-এর এই উদ্ভাবনগুলিই আধুনিক বিমান চালনার মূল ভিত্তি স্থাপন করে, যার ওপর ভিত্তি করেই আজ বিশ্বজুড়ে আকাশপথ মানব যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আজকের ইস্পাতের পাখির গতি এবং দক্ষতা সেই ১৯০৫ সালের কাঠ ও কাপড়ের বিমানের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে।


Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies