বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এ কারাকাত আসন থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশন (CPIML) মনোনীত প্রার্থী কমরেড অরুণ সিং ৭৪,১৫৭ ভোট পেয়ে ২৮৩৬ ভোটের ব্যবধানে এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছেন। এই নিরঙ্কুশ জয় বিহারের রাজনৈতিক মানচিত্রে কমরেড অরুণ সিং এবং সিপিআইএমএল-এর সুদৃঢ় অবস্থানকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এক দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক কর্মজীবনের ধারাবাহিকতা
কমরেড অরুণ সিং একজন অভিজ্ঞ বামপন্থী নেতা এবং রোহতাস জেলার কারাকাত বিধানসভা কেন্দ্রের তিনবারের নির্বাচিত বিধায়ক। কৃষক অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের সংগ্রামে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। তিনি সিপিআইএমএল-এর কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য এবং সারা ভারত কৃষক মহাসভার সাথেও নিবিড়ভাবে যুক্ত। ২০২৫ সালের এই বিজয় তাঁর পূর্ববর্তী সাফল্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন; এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনি বিজেপি প্রার্থীকে ৮২,৭০০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন।
কারাকাত: জনগণের ম্যান্ডেটের কেন্দ্রবিন্দু
কমরেড অরুণ সিং-এর এই বিজয় কারাকাত বিধানসভার ভোটারদের তাঁর প্রতি গভীর আস্থা ও সমর্থনেরই প্রতিফলন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি স্থানীয় জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস সংগ্রাম করেছেন। এই জয় বিহারের রাজনীতিতে সিপিআইএমএল-এর প্রভাব ও সাংগঠনিক শক্তিকে আরও সুসংহত করবে।
নির্বাচনী বিশ্লেষণ: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
২০২৫ বিহার বিধানসভা নির্বাচন: কমরেড অরুণ সিং (সিপিআইএমএল) ৭৪,১৫৭ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেডি(ইউ)-এর মহাবলি সিং-এর বিরুদ্ধে তিনি ২৮৩৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। এই নির্বাচন গণনা প্রক্রিয়া জুড়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল, যেখানে উভয় প্রার্থী শেষ দফা পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেন।
২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচন: এই আসনেও কমরেড অরুণ সিং জয়ী হয়েছিলেন, যেখানে তিনি প্রায় ৮২,৭০০ ভোট পেয়েছিলেন এবং বিজেপি-এর রাজেশ্বর রাজকে ১৮,১৮৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এটি কারাকাত থেকে তাঁর পুনঃনির্বাচন নিশ্চিত করে এবং তাঁর প্রতি শক্তিশালী জনসমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
কারাকাত বিধানসভা কেন্দ্রের জনসংখ্যা ও প্রধান সমস্যাসমূহ
কারাকাত বিধানসভা কেন্দ্রটি বিহারের রোহতাস জেলায় অবস্থিত এবং এটি রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। এটি একটি সাধারণ শ্রেণীর আসন, যা তফসিলি জাতি বা তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নয়। ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এই কেন্দ্রে প্রায় ৩,২৮,৪৩৪ জন নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন, যার মধ্যে ১,৭৩,৫৯৩ জন পুরুষ ভোটার এবং ১,৫৪,৮২১ জন মহিলা ভোটার ছিলেন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন ২০ জন। এখানকার লিঙ্গ অনুপাত প্রায় প্রতি ১০০০ পুরুষ ভোটারের জন্য ৮৯২ জন মহিলা ভোটার।
জনসংখ্যার দিক থেকে, কারাকাত ব্লকের জনসংখ্যা মূলত গ্রামীণ। এখানে কোয়েরি (কুশওয়াহা), রাজপুত এবং যাদব সম্প্রদায়ের ভোটাররা লোকসভা কেন্দ্র পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। তফসিলি জাতি প্রায় ২১.৬২% স্থানীয় জনসংখ্যা গঠন করে। এই কেন্দ্রের সাক্ষরতার হার বিহারের গড় হারের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি, যা ৭৪.৪০%। এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮৩.৮৬% এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ৬৪.৪৩%।
কারাকাতের প্রধান সমস্যাগুলি সাধারণত কৃষি উন্নয়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো, শিক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, যা এই কেন্দ্রের গ্রামীণ ও আর্থ-সামাজিকভাবে মিশ্র প্রকৃতির প্রতিফলন। ২০২৫ সালের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি প্রায় ৫৯.৫৩% ছিল, যা পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় সামান্য বেশি।
রাজনৈতিকভাবে, কারাকাত সিপিআইএমএল, আরজেডি, জেডি(ইউ) এবং বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী। এই এলাকার ভোটাররা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন এবং বামপন্থী ও সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন, যা সিপিআইএমএল-এর কমরেড অরুণ সিং-এর ধারাবাহিক নির্বাচনী সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
এই ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য কমরেড অরুণ সিং-কে সিপিআইএমএল এবং সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন।