সিমলা: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ এক অভূতপূর্ব ও রহস্যময় প্রাকৃতিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। গত অক্টোবর মাসের ২৫ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে, বিশেষ করে রাত ৯টা বা তার পরেও সেখানকার রাতের আকাশ হঠাৎ করে দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই বিরল দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল যেন গভীর রাতে সূর্য উপস্থিত। স্থানীয়রা এটিকে প্রকৃতির নিয়মে এক অস্থায়ী 'ত্রুটি' বা 'আর্থ গ্লিচ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
আলোর বন্যায় রাতের আকাশ
এই কয়েক দিনের রাতের পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ পরাবাস্তব। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আকাশ থেকে আসা অস্বাভাবিক এক উজ্জ্বল আলো যেন সমগ্র পর্বত এবং উপত্যকাকে আলোকিত করে তুলেছিল। রাতের আঁধার ভেদ করে আসা সেই আলো এতটাই তীব্র ছিল যে অনেক জায়গায় গাছের ও বাড়ির ছায়াও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল, যা পূর্ণিমার আলোর চেয়েও অনেক বেশি উজ্জ্বল—ভোরের সূর্যের মতোই এক মায়াবী দৃশ্যের সৃষ্টি করেছিল।
সাধারণত যা দেখা যায় না, এমন অপ্রত্যাশিত উজ্জ্বলতার কারণেই এই ঘটনাটি ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। প্রথমে অনেকে এটিকে কোনো শক্তিশালী আলোর উৎস বা বড় অগ্নিকাণ্ডের ফল বলে মনে করেছিলেন, কিন্তু পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোটি সরাসরি আকাশ থেকেই আসছিল। বয়স্কদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে অলৌকিক বা কোনো দৈব সংকেত হিসেবেও আলোচনা করেছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ কৌতূহলবশত বাইরে বেরিয়ে এই বিরল দৃশ্য নিজেদের চোখে দেখেছেন।
'আর্থ গ্লিচ' এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, বিশেষত ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে এই ঘটনার অসংখ্য ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে নেটিজেনরা এই ঘটনাকে 'রহস্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য' বা প্রকৃতির নিয়মের বাইরে এক 'আর্থ গ্লিচ' বলে অভিহিত করেছেন। দ্রুতই 'আর্থ গ্লিচ' শব্দটি ভাইরাল হয়ে যায়, যা জনসাধারণের এই অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে যে প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা ক্ষণিকের জন্য বিঘ্নিত হয়েছিল।
বৈজ্ঞানিক মহলে জল্পনা
এই অত্যাশ্চর্য ঘটনার সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয় এবং এটি নিয়ে বিজ্ঞানী মহল এবং স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন জল্পনা চলছে। কোনো নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পাওয়ায় রহস্য আরও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ অনুমান করছেন যে এটি অস্বাভাবিক শক্তিশালী বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি বা সূর্য-সম্পর্কিত অপটিক্যাল ইল্যুশনের ফল হতে পারে।
অন্য একটি মত অনুযায়ী, এটি অত্যধিক তীব্র 'এয়ারগ্লো' (Airglow) বা বায়ুমণ্ডলীয় দ্যুতির ফল হতে পারে, যেখানে উচ্চ উচ্চতায় পারমাণবিক স্তরে আলো বিকিরণ ঘটে। তবে, রাত ৯টা বা তার পরে এর এত তীব্রতা বিরল।
কেউ কেউ আবার সৌর নিঃসরণ বা প্রতিফলনের সঙ্গে কোনো বিরল মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞরা আরও খতিয়ে দেখছেন যে এই সময়ে কোনো অনাবিষ্কৃত উল্কাপাতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। তবে, আলোর তীব্রতা এবং রাতের গভীর সময়ে এর উপস্থিতি এটিকে সহজ ব্যাখ্যার ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে।
হিমাচল প্রদেশের এই বিরল 'দিনের আলো'র ঘটনা স্থানীয়দের পাশাপাশি বিজ্ঞানীদেরও কৌতূহলী করে তুলেছে। এটি বিশ্বের রহস্যময় ও সুন্দর প্রাকৃতিক ঘটনার তালিকায় এক নতুন মাত্রা যোগ করল, যা মানবজাতিকে প্রকৃতির বিশালতা ও অপ্রত্যাশিত ক্ষমতা সম্পর্কে আরও একবার ভাবতে বাধ্য করছে।