" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া জনতার ঢল, রক্তদাতাদের উৎসব পরিণত হলো সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের মহামেলায় //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়া জনতার ঢল, রক্তদাতাদের উৎসব পরিণত হলো সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের মহামেলায়

 



নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর, ৬ ডিসেম্বর:
আজকের সন্ধ্যায় সিটি সেন্টারের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহ যেন হয়ে উঠেছিল শিল্প, মানবসেবার অঙ্গীকার ও সামাজিক ঐক্যের এক সম্পূর্ণ সিম্ফনি। দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টিয়ারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের আয়োজিত ‘বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৫’ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়—এটি আজ রূপ পেল এমন এক সামাজিক উদ্যোগে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ ও শিল্পের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।



রাত ৮:৩৮-এ অনুষ্ঠান সদ্য শেষ হলেও, সৃজনী চত্বরে তখনও দর্শকদের আলোচনা, প্রশংসা, এবং উচ্ছ্বাস ধরা পড়ছিল স্পষ্টভাবে—যা এই সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক সাফল্যের প্রমাণ বহন করে।


দর্শকের ঢল: সংখ্যায় নয়, উৎসাহে রেকর্ড গড়ল দুর্গাপুর

প্রেক্ষাগৃহের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায় বিকেল থেকেই। সৃজনীর প্রায় ৬০০ আসন মুহূর্তে পূর্ণ হয়ে যায়।
তবে আসল বিষয় শুধু ভিড় নয়—দর্শকদের আচরণ, মনোযোগ ও উৎসাহ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

দুর্গাপুর একটি শিল্পাঞ্চল হলেও, এখানে যে সাংস্কৃতিক পিপাসা কত গভীর—তার সার্থক প্রতিফলন মিলল আজকের অনুষ্ঠানে।



পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর, কিন্তু বিন্দুমাত্র বিশৃঙ্খলা নেই—বরং মানুষের মুখে ছিল এক ধরনের গর্বের ছাপ।

বাংলার বিভিন্ন শহরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শকসংখ্যা কমে যাওয়ার অভিযোগ শোনা গেলেও, দুর্গাপুর যেন সেই ধারার বাইরে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করছে।




‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’: আধুনিক মঞ্চে ধ্রুপদী আত্মশুদ্ধির কাব্য

উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’ যে আজকের মূল আকর্ষণ হবে, তা আগেই অনুমান ছিল; কিন্তু নাটকটি যে এভাবে দর্শকদের আবেগে নাড়া দেবে—তা হয়তো অনেকেরই ধন্ধের বাইরে।

নাটকের মূল শক্তি তিনটি স্তম্ভে দাঁড়িয়ে—

১) ধ্রুপদী কাহিনির সারল্য ও গভীর মানবিকতা
২) শিল্পীর অভিনয়শক্তি ও চরিত্র নির্মাণ
৩) মঞ্চসজ্জা, আলো ও সংগীতের আধুনিক সমন্বয়

নাটকটি অনায়াসে দর্শককে নিয়ে যায় মাঝযুগীয় ভক্তিবাদের কেন্দ্রে, যেখানে বিল্বমঙ্গলের কামনা থেকে করুণায় উত্তরণ—গল্প নয়, আত্মবিশ্লেষণের এক যাত্রা।
আজকের প্রেক্ষাপটে এই নাটকের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি, কারণ মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সময়ে এমন আখ্যান মানুষকে অন্তর্দৃষ্টি দেয়।



দর্শকদের করতালি—কেবল প্রশংসা নয়—এক প্রয়োজনীয় অভিব্যক্তি হয়ে উঠেছিল, যেন তারা নাটকের প্রতিটি স্তর উপলব্ধি করেছিলেন গভীরভাবে।


রক্তদানের আন্দোলন: সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত এক মানবিক শক্তি

অনেক সাংস্কৃতিক মঞ্চেই সমাজসেবাকে কেন্দ্র করে বক্তব্য বা আনুষ্ঠানিকতার দেখা মেলে, কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানটি সেই প্রচলিত ধারণাকে ছাড়িয়ে গেছে।
এখানে রক্তদানে উৎসাহী কর্মী ও ‘ব্লাড মোটিভেটর’দের সম্মান জানানো হয়েছে এমন সময়ে, যখন দেশজুড়ে নিরাপদ রক্তসংগ্রহ একটি বার্ষিক চ্যালেঞ্জ।

উৎসবটি যেন এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—
“সংস্কৃতি শুধুই আনন্দ নয়, দায়বদ্ধতাও সৃষ্টি করতে পারে।”



দুর্গাপুর SD Voluntary Blood Donors Forum-এর আগামী বছরের ‘রজত জয়ন্তী বর্ষ’ উদযাপনের ঘোষণায় আজকের অনুষ্ঠান পেয়েছে ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির আরও দৃঢ় ভিত্তি।

এটি শুধু রক্তদাতাদের সম্মান নয়—সমাজকে যুক্ত করার এক কৌশলগত প্রচেষ্টা, যা অন্যান্য মহকুমা বা জেলার সংগঠনের কাছে একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।


সংস্কৃতি–সমাজসেবা–মানবিকতার ত্রিবেণী: কেন এই উৎসব আলাদা?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন—আজকের অনুষ্ঠান কয়েকটি কারণে ব্যতিক্রম:

১) অংশগ্রহণের মাত্রা

শত শত দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রমাণ করে, দুর্দশার বাজারেও মানুষ শিল্পকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

২) সমাজসেবার সঙ্গে শিল্পের সংযুক্তি

রক্তদান আন্দোলনকে সাংস্কৃতিক মঞ্চে তুলে আনার মধ্য দিয়ে জনসংযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।

৩) স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের উন্নয়ন

দুর্গাপুরে বড় অনুষ্ঠান সাধারণত সীমিত, কিন্তু এই উৎসব বারবার প্রমাণ করছে—এ শহর সাংস্কৃতিকভাবে আত্মনির্ভর।




৪) পরিবারমুখী ও নিরাপদ পরিবেশ

ছোট-বড়, প্রবীণ-যুবক—সকলেই একত্রে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন, যা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।


সমাপ্তি, কিন্তু রেশ দীর্ঘস্থায়ী

রাত ৮টার কিছু পর পর্দা নামলেও দর্শকদের আলোচনা থামেনি।
অনেকে নাটকের দৃশ্য নিয়ে কথা বলছেন, কেউ রক্তদান কর্মসূচির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী, আবার কেউবা শুধু এই সন্ধ্যার আবেগে ডুবে আছেন।

আয়োজকদের চোখেমুখে ক্লান্তি থাকলেও, তার চেয়েও বেশি ছিল সন্তুষ্টির দীপ্তি। তাদের কথায়—
“সমাজসেবার সঙ্গে সংস্কৃতি—এই পথই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।”


সবশেষে বলা যায়—

আজকের সন্ধ্যা দুর্গাপুরকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করল।
এটি ছিল মানবিকতার উৎসব, শিল্পের পূজা, আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক জোরালো ঘোষণা।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies