১৯৩০ সালের ১৭ই জুন আজকের দিনটিতে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সত্যেন দাস।বাংলা ছায়াছবির অমূল্য রতন অনুপ কুমার।আদি বাড়ী হুগলির পান্ডুয়ায়।বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দাস।চলচ্চিত্রে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করলেও অনুপকুমার মূলত থিয়েটারকর্মী।তাঁর বাবা রঙ্গমঞ্চের বিখ্যাত গায়কশিল্পী ও সুরকার ছিলেন।তিনি অনুপ কুমারকে মাত্র ১২ বছর বয়সে স্টার থিয়েটারে মহেন্দ্র গুপ্তের কাছে নিয়ে যান এবং মাসিক ২০ টাকা বেতনে অনুপকুমার পেশাদার রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হন।অনুপকুমার শ্রীরঙ্গম,বিশ্বরূপা,কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে বেশ কিছুদিন নিয়মিত অভিনয় করতেন।ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল ভাড়া নিয়ে তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নূরজাহান প্রযোজনা করেন ১৯৭৬ সালে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মঞ্চে আগুন লেগে তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
পেশাদারী মঞ্চে অনুপকুমার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম শ্যামলী,হঠাৎ নবাব,ছদ্মবেশী মল্লিকা,অঘটন,রাম শ্যাম যদু ইত্যাদি এবং শেষ পর্বে তাঁর মঞ্চাভিনয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চন্দনপুরের চোর নাটকে।পেশাদারি মঞ্চে আনুমানিক ৫০টি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন এবং তিনি অভিনয় করেছিলেন রঙ্গনা থিয়েটারে কি বিভ্রাট নামে একটি নাটকে প্রায় ৩০০ রজনী।১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি নাট্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়। দীনবন্ধু পুরস্কারে সম্মানিত হন ১৯৯৬ সালে ও প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে সংবর্ধিত হন ১৯৯৭ সালে।
অভিনেত্রী অলকা গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর সহধর্মিনী।১৯৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর আজকের দিনটিতে মাত্র ৬৮ বছর বয়সে বাংলা ছবির যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গটি নিভে গেছিল তিনি সত্যেন দাস,বাংলা সিনেমার অনুপ কুমার।তিনি অভিনয়ের অ আ ক খ পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর পিতা ধীরেন্দ্রনাথ দাস এবং প্রণম্য শিশির কুমার ভাদুড়ীর কাছ থেকে।১৯৩৮ সালে ধীরেন গাঙ্গুলী পরিচালিত হালকথা ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে প্রথম তিনি জ্বলে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীকালে নিমন্ত্রণ ও পলাতক ছবি দুটিতে অভিনয় করে সেই আগুনের আঁচ লাগিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালী দর্শকের মননে,দর্শণে এবং শ্রবণে।অনুপ কুমার ছায়াছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন থিয়েটার,যাত্রা এবং নির্দেশনার কাজে।
১৯৬৪ সালে তিনি BFJA পুরস্কার পান পলাতক ছবির শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে। ১৯৮৮ সালে রুপোর পদক গ্রহণ করেছিলেন স্টার থিয়েটার থেকে।পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে।শিরোমণি পুরস্কারে ভূষিত হলেন ১৯৯১ সালে।১৯৯৭ সালে অনুপ কুমার পেলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের তকমা এবং বাংলা সিনেমার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে আবারও BFJA পুরস্কার গ্রহণ করলেন তিনি।পলাতক ছবিতে তিনি আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন কমেডির মূল সূত্র সময়ের পরিমাপ।কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে যে ছবিগুলোকে অনুপ কুমার ইতিহাসের প্রথম পাতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন বসন্তবিলাপ,মৌচাক,দাদার কীর্তি,প্রতিশোধ সেগুলির অন্যতম।১৯৯৬ সালে তিনি কাশিপুর থেকে সিপি আই এম এর হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে আসন পেয়েছিলেন।অনুপ কুমার ছিলেন ভারতীয় সিনেমার মধ্যমণি।


