ওরা প্রতিদিন সাথীদের লাশ কুঁড়োতে কুঁড়োতে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলো। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন কমরেড খুন হচ্ছেন। ওরা জানতো যে কোন সময় নিজেরাও লাশ হয়ে যাবে। অনুজ পান্ডে, ফুল্লরা মন্ডল, ডালিম পান্ডে, রথীন দন্ডপথ, জয়দেব গিরিরা দেখেছিলো কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট্ট মেয়েটির কালি দিয়ে লেখা পোষ্টার
তখন মাওবাদী, জনসাধারণের কমিটি, রামধনু জোট জঙ্গলমহলে ভয়ংকর সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে সঙ্গে যুক্ত বিরোধী দল। মাইন দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয় উড়িয়ে হত্যা করতে চেয়ে ছিলো। সামান্য কয়েক সেকেন্ডের হেরফেরের জন্য বুদ্ধবাবু বেঁচে গিয়েছিলেন সেই দিন।
সেই সময় জঙ্গলমহলের আকাশ বাতাস বোমা বন্দুক বারুদের গন্ধে নিশ্বাস নেওয়া তখন
কঠিন হয়ে গিয়ে ছিলো। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, ধরমপুরের নেতাই গ্রামে রথীন দন্ডপথের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে মাও বাহিনী। মৃত্যু তখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে অস্ত্র তুলে নিয়ে ছিলো তারা।
তুমুল লড়াইয়ে চারজন গ্রামবাসী সহ মোট নয় জনের মৃত্যু হয়।
পরিবর্তনের সরকার আসার পরে একে একে গ্রেফতার হন অনুজ পান্ডে, ডালিম পান্ডে, ফুল্লরা মন্ডল, রথীন দন্ডপথেরা। আজ প্রায় এগারো বছর ধরে তারা কারাগারের অন্তরালে আছে।
অথচ ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হানা দিয়ে ২৪ জন সৈন্যকে হত্যা করার অভিযোগগে ধৃত মূল অভিযুক্ত বিক্রম আজ জেলের বাইরে।
২০১০ সালের ২৮ শে মে, মাও বাহিনী জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ১৪৮ জনকে হত্যা করেছিলো। বামেদের অভিযোগ এই ঘটনায় যুক্ত ছত্রধর মাহাতো, সুচিত্রা মাহাতো, পবির গড়াই, জাগরী বাস্কেরা কিন্তু আজও জেলের বাইরে। শুধু তাই না, এরা এখন শাসক দলের বড় নেতা এবং সরকারী সিকিউরিটি প্রাপ্ত।
আওয়াজ উঠছে তারা কেন জেলে পচবে?
আওয়াজ উঠছে, অনুজ পান্ডে, ডালিম পান্ডে, ফুল্লরা মন্ডল, রথীন দন্ডপথ, জয়দেব গিরি সহ সমস্ত সহযোদ্ধাদের মুক্তি দিতে হবে যারা নিজেদের প্রাণ তুচ্ছ করেই মাওবাদীদের মোকাবিলা করেছিলেন।


