মুর্শিদাবাদের কাশীমবাজার ছোট রাজবাড়ীতে একদিনের রাজকীয় আমেজ
অনেকদিন পর ঘরের ভেতর বদ্ধ মন আবারো বাইরের আলো হাওয়া মেখে বাঁচার রসদ খুঁজে নিতে চাইছিলো।সেই উদ্দেশ্যেই কর্তা,গিন্নী বেরিয়ে পরলাম মুর্শিদাবাদের কাশীমবাজার ছোট রাজবাড়ীর দিকে।কাশীমবাজার দুধসাদা রাজবাড়ী অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে ৪ ঘন্টার যাত্রাপথ অতিক্রম করে।
প্রবেশমাত্র নতুন অতিথিদের রাজবাড়ীর কুলপুরোহিত বরণ করলেন শঙ্খধ্বনি,আর বেলফুলের সুগন্ধে।এরপর এলো স্লিম কাঁচের গ্লাসে ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস!পাকা আমের রঙের সরবতে হাঁসফাঁস করা গরমের ক্লান্তি কিছুটা হলেও কাটলো।
প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, বর্তমান রাজপরিবারের রাণীমা শ্রীমতি সুপ্রিয়া দেবী Sugar and spice এর কর্ণধার।রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজকর্মচারী শ্রী দীনবন্ধু রায়।রায় পরিবারের তিনপুরুষ সদস্য এখনো জীবিত আছেন।
যথা-শ্রী প্রশান্ত রায়,শ্রী পল্লব রায়,শ্রী সৌরভ রায় ও তাঁদের স্ত্রীরা।বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান যেমন রথযাত্রা,দুর্গাপুজো,জগদ্ধাত্রী পুজো,অন্নপূর্ণাপুজোতে এঁরা কলকাতা থেকে রাজবাড়ীতে আসেন।
রাজবাড়ীতে থাকার ঘরগুলোর মধ্যে রাজকীয় পালঙ্কে নরম শয্যা, ঝাড়বাতির মিঠে আলো,ছোট্ট ফ্রিজ,সুসজ্জিত বাথরুম থাকার পক্ষে ভীষণভাবেই আরামদায়ক ও আনন্দদায়ক।সত্যিই বাস্তবে রাজা-রাণী না হয়েও রাজকীয় সমারোহে ঐদিনের জন্য নিজেদেরকে রাজা-রাণী মনে হতে পারে।দুপুরের মধ্যাহ্নভোজে ছিলো কাঁসারথালায় সুসজ্জিত "রাজভোগ"মেনু।যার পরতে পরতে বাঙালীয়ানা।ভাত,পোলাও,মুড়ো ঘন্ট, চচ্চড়ী,মুর্শিদাবাদী মাছের ঝোল,চিংড়ির মালাইকারী,মাংস কষা,চাটনী,পাঁপড়,মিষ্টি,দই।
রাজবাড়ীর স্টাফদের আদর আপ্যায়ণ ভোজন মাধুর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো।মিউজিয়ামে রাজবাড়ীর পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত সামগ্রী সযত্নে রক্ষিত। নাচঘর,ডাইনিংহল,বেলজিয়াম কাচের আয়না,পুরনোফার্ণিচার,টেপরেকর্ডার,টাইপরাইটার,সর্বোপরি কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের সামগ্রী সত্যিই আর্কষণীয়।এই মিউজিয়ামের উপর দোতলায় রাজবাড়ীর সদস্যদের থাকার সুব্যবস্থা।ঘরগুলি রাজপরিবারের সদস্যরা এলেই খোলা হয়।প্রশস্ত উঠোন,টেনিস কোর্ট(যেখানে পরিবারের বর্তমান সদস্যরাএখনটেনিসখেলেন),পুকুর,বাগান,লাইব্রেরী,দুর্গাদালান,চণ্ডীমন্ডপ,রাধামাধবের মন্দির দেখার মতো।সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় অতিথিশালার ঘরগুলোর মাঝে সুন্দর বৈঠকখানা।
বড় ঝাড়বাতির সোনালী আলোয় সন্ধ্যেটা নেমেছিল নীরবে,পরিপাটী হয়ে।
কাশিমবাজার রাজবাড়িতে আপনি প্যাকেজ ট্যুরে যেতে পারেন অথবা যেতে পারেন উইকেন্ডে ঘর বুক করে ছুটি কাটাতে। সাধারণত ৩ দিনের প্যাকেজ গুলিতে জনপ্রতি ১১,০০০/- করে চার্জ নেওয়া হয়। অন্যদিকে দুজনের জন্যে এখানকার বিভিন্ন রুমগুলির একরাতের ভাড়া শুরু হয় ৯০০০/- থেকে ১০০০/- এর মধ্যে। এনাদের রূপকথা বুটিক থেকে আপনি মুর্শিদাবাদের সিল্ক শাড়ি এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের জিনিসও কেনাকাটা করতে পারেন।
বৈঠকখানার সোফায় বসে এই সন্ধ্যেটাকে উপভোগ করা যেতে পারে। প্রাতরাশ কমপ্লিমেনটারী হরেক রকম খাবারে ভোজন করলাম রাজার মতো।
তারপর কাশীমবাজার রাজবাড়ীকে অবশেষে বিদায় জানিয়ে যাত্রা বাড়ীর দিকে,,,,
আশা আবার আসা হবে কোন একটা বছরে রাজবাড়ীর পুজো দেখতে!
কলমে মণিদীপা দত্ত




