" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory পিয়তর কাপিৎসা এক পদার্থ বিজ্ঞানীর লড়াইয়ের কথা //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

পিয়তর কাপিৎসা এক পদার্থ বিজ্ঞানীর লড়াইয়ের কথা

|| পিয়তর কাপিৎসা ||

লেখা : ঈশিতা টিকাদার

     

আজ যে বিজ্ঞানীর কথা বলব, তাঁকে নিয়ে আলোচনা করার আগে পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ক্রয়োজেনিক্স (cryogenics ) বা হিমবিজ্ঞান (low temperature physics ) নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরব। Cryogenics বা Low Temperature Physics: পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখায় অতি শীতল তাপমাত্রায় (-150℃ বা 123 K তাপমাত্রার নীচে ), বলা ভালো পরম শূন্য তাপমাত্রার (0K বা -273℃) কাছাকাছি তাপমাত্রায় পদার্থের গতিপ্রকৃতি, আচরণ ও ধর্ম নিয়ে নিয়ে চর্চা করা হয়। 0K কাছাকাছি তাপমাত্রায় পদার্থের ভৌত অবস্থা ও (তাপ পরিবাহিতা, তড়িৎ পরিবাহিতা, সান্দ্রতা ইত্যাদি) বিভিন্ন ভৌত ধর্মের পরিবর্তন ঘটে।

স্কুলের গণ্ডিতে আমরা তরল, গ্যাসীয় পদার্থের ধর্ম সম্পর্কে জেনেছি, কিন্তু অতি-তরল বা Superfluid (fluid বলতে তরল গ্যাস উভয়ই) কী জিনিস জানেন? সুপারফ্লুইড (Superfluid) হল এমন ধরণের তরল যার সান্দ্রতা শূন্য (সান্দ্রতা কী তা সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে জল অনুভূমিক তলে সহজে গড়িয়ে যেতে পারে কিন্তু মধু পারে না, মধুর থেকে জলের সান্দ্রতা কম) অর্থাৎ এই তরল প্রবাহিত হওয়ার সময় তার গতির বিরুদ্ধে ঘর্ষণজনিত কোন প্রতিরোধ আসে না। আলোড়িত করা হলে সুপারফ্লুইডে যে আবর্ত বা ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘুরতে থাকে (যেখানে সাধারণ তরলের ক্ষেত্রে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘূর্ণন থেমে যায়)।

তবে প্রকৃতিতে বা সাধারণ তাপমাত্রায় এর কোন অস্তিত্ব নেই। তরল হিলিয়ামকে অতি শীতল তাপমাত্রায় (2.17 K অর্থাৎ -270.83℃ ) ঠাণ্ডা করলে তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটে সুপারফ্লুইড-এ পরিণত হয়। আর এই তরল হিলিয়ামের সুপারফ্লুইড দশা প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন রুশ বিজ্ঞানী পিয়তর কাপিৎসা (Pyotr Kapitsa)।Low Temperature Physics এ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও আবিষ্কারের জন্য পিয়তর লিওনিদোভিচ কাপিৎসা ১৯৭৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর জন্ম ১৮৯৪ সালের ৯ই জুলাই রাশিয়ার ক্রনস্টাথ (Kronstadt) শহরে।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাপিৎসার পড়াশোনা ব্যাহত হয়, ওই সময় ২ বছর তিনি পোলিশ ফ্রন্টে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে যোগ দেন। যুদ্ধশেষে ১৯১৮ সালে পেত্রোগার্দ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েট হন এবং পরে ওখানেই শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। ওই সময় (১৯১৮-১৯১৯) বিশ্বব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর কবলে কাপিৎসা একাধারে তাঁর বাবা, প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারান। এ.এফ.ইওফী (A.F.Ioffe)-র পরামর্শে ১৯২১ সালের জুলাই মাসে কাপিৎসা ইংল্যান্ড যান, সেখানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Cavendish ল্যাবরেটরিতে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড-এর তত্ত্বাবধানে গবেষণার কাজ শুরু করেন।

গবেষণার কাজে কাপিৎসার অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ও কর্মদক্ষতায় রাদারফোর্ড মুগ্ধ হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে কেমব্রিজ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন এবং এর কিছুদিনের মধ্যেই কাপিৎসা ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল স্কলারশিপ পান ও ট্রিনিটি কলেজের সদস্য হন। শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে আলফা কণার গতিপথ কতটা বিচ্যুত হয় তা নিয়ে কাপিৎসা এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেন। ১৯২৪ সালে অতি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরির পদ্ধতি অনুধাবন করেন এবং ২ ঘনসেমি আয়তনের ৩২০ কিলোগস (KG বা Kilo Gauss) শক্তি সম্পন্ন চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetic field) তৈরি করেন।

এইসময় কাপিৎসা ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে ম্যাগনেটিক রিসার্চের কাজে ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত হন। ১৯২৮ সালে তিনি আবিষ্কার করলেন যে, ধাতুকে চৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে তার রোধ (electrical resistance) রৈখিকভাবে (linearly) বৃদ্ধি পায়, এই ঘটনাটি Kapitsa's law of Magnetoresistance নামে খ্যাত।

পেত্রোগ্রাদে থাকাকালীন ইওফির আয়োজিত বিজ্ঞান সভা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কাপিৎসা ১৯২২ সালে কেমব্রিজেও “KAPITSA CLUB” গড়ে তোলেন। শুধু কেমব্রিজই নয়, কেমব্রিজের বাইরের বহু পদার্থবিদ এই বিজ্ঞান ক্লাবের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কাপিৎসা The Royal Society Mond laboratory এর ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন। ওই সময় তিনি Low temperature physics নিয়ে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। ১৯০৮ সালে ডাচ বিজ্ঞানী Kamerlingh Onnes হিলিয়াম গ্যাস এর তাপমাত্রা 4.2K(-268.8℃) অর্থাৎ স্ফুটনাঙ্কের নিচে নামিয়ে তরল হিলিয়াম উৎপন্ন করেন। এই তাপমাত্রা কমানোর প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ ছিল না, এমনকি এই জটিল পদ্ধতিতে খুব স্বল্প পরিমাণ তরল হিলিয়াম উৎপাদন করা সম্ভব। কাপিৎসার উদ্দেশ্য ছিল Kamerlingh Onnes এর সময়সাপেক্ষ পদ্ধতির পরিবর্তে এমন কোন ব্যবস্থাপনা রূপায়ণ করা যা অল্প সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল হিলিয়াম উৎপাদন করতে পারবে।
কাপিৎসা তাঁর পদার্থবিদ্যা ও যন্ত্রবিজ্ঞানের (engineering) জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি দক্ষ শীতলীকরণ যন্ত্র (cooling by adiabatic expansion এই নীতির উপর ভিত্তি করে) তৈরী করেছিলেন যা প্রতি ঘন্টায় ২লিটার তরল হিলিয়াম উৎপাদন করতে সক্ষম। এই আবিষ্কার Low temperature physics-এ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করে।

কাপিৎসা রাদারফোর্ডকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতেন, মজা করে রাদারফোর্ডের নাম দিয়েছিলেন 'Crocodile' কেননা রাশিয়ায় কুমীরকে পরিবারে বাবার প্রতীক বা সম্ভ্রম ও সশ্রদ্ধ ভয়ের প্রতীক মানা হয়। গুরু হিসাবে রাদারফোর্ডও প্রিয় শিষ্যকে যথাসামর্থ সাহায্য সহযোগিতা করে গেছেন। ১৯৩৪ সালে কাপিৎসা রাশিয়ায় ফেরেন, প্রতিবছরই গরমের সময় মাকে দেখতেই দেশে ফিরতেন। সে বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্মকর্তারা তাঁর দেশ ছাড়ার ভিসা বাতিল করে দেয় এবং তাঁকে রাশিয়ায় থাকতে বাধ্য করে। কাপিৎসা পড়লেন বিপাকে, তাঁর এতদিনের গবেষণায় কি তাহলে ইতি টানতে হবে? রক্ষাকর্তা হলেন স্বয়ং রাদারফোর্ড। কূটনৈতিক বুদ্ধি দিয়ে কাপিৎসার সমস্যার সমাধান করে দিলেন, সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের সাথে মধ্যস্থতা করে Mond ল্যাবরেটরি থেকে কাপিৎসার গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। অসমাপ্ত গবেষণার কাজ সম্পন্ন করতে কাপিৎসা রাশিয়ার মস্কোতে গড়ে তুললেন Institute of Physical Problems, কেমব্রিজ থেকে আনানো যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত হল তাঁর ইনস্টিটিউট। তরল হিলিয়াম নিয়ে চলল আরও একগুচ্ছ পরীক্ষা নিরীক্ষা, 2.2K উষ্ণতায় হিলিয়াম-4 এর অবস্থান পরিবর্তন (phase transition) ঘটে, একে লামডা পয়েন্ট (lambda point) বলে। কাপিৎসা তরল হিলিয়ামের উষ্ণতা লামডা পয়েন্টের নীচে নিয়ে গিয়ে দেখলেন 2.2 কেলভিনের নীচে তরল হিলিয়াম আণুবীক্ষণিক ছিদ্রের মধ্যে দিয়েও বয়ে যেতে পারে এমনকি মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে পাত্রের গা বেয়ে উঠতে পারে। এমনকি এই তরলের তাপপরিবাহিতাও অসীম। Superconductivity-এর সাথে তুলনা টেনে সান্দ্রতাহীন এই তরলের নাম রাখেন Superfluid। ১৯৩৮ সালে জানুয়ারি মাসে কাপিৎসা তাঁর এই Superfluidity আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন।

১৯৩৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের KGB secret police তরুণ বিজ্ঞানী ল্যান্ডাউ (Lev Landau)-কে নাৎজি গুপ্তচর অপবাদ দিয়ে জেলে বন্দী করলে কাপিৎসা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে স্তালিনকে চিঠি লেখেন, অবশেষে কাপিৎসার হস্তক্ষেপে ল্যান্ডাউ জেল থেকে ছাড়া পান। এমনকি আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির ফককেও মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি থেকে বাঁচান। ১৯৪২ সালে কাপিৎসা এমন একটি যন্ত্র তৈরী করেন যা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২০০ কেজির মতো তরল অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাপিৎসার এই যন্ত্রের নকশাকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ায় অক্সিজেন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠে। ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক অস্ত্র (nuclear weapon) তৈরির প্রকল্পে কাপিৎসা যোগ দিতে অসম্মত হন এবং এরজন্য কাপিৎসাকে ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্যাল প্রবলেমস্ এর ডিরেক্টর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, পরে যদিও ১৯৫৫ সালে স্তালিনের মৃত্যুর পর ওই পদ আবার ফিরে পান।

পিয়তর কাপিৎসা ১৯৮৪ সালের ৮ই এপ্রিল ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি শুধু নোবেলজয়ীই নন, Neils Bohr Medal, Rutherford Medal, Order of Lenin, Hero of Socialist Labour মতো আরও অনেক সম্মানের অধিকারী ছিলেন।

Tags

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies