মুজফ্ফর আহমেদ দেশের মুক্তি সংগ্রামের এক লাইটহাউ
শংকর পাল
বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড় এই আপ্ত বাক্যটি সারা জীবন পালন করেছিলেন যিনি তার আজ ১৩৪ তম জন্মদিবস পালন চলছে গোটা বাংলা জুড়ে।মুজফ্ফর আহমেদ যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা দেশে কমিউনিস্ট পার্টির ভিত্তি তৈরি করার ক্ষেত্রে।মার্কসের মতাদর্শ ব্যবহার করেই দেশের শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।আত্মত্যাগের মাধ্যমে পার্টির গণ ভিত্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। ১৯৮৯ সালে ৫ ই আগস্ট বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।১৯১৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পরে তিনি মনোনিবেশ করেন সাহিত্য অধ্যয়নে, ১৯১৮ সালে তিনি নিজ রচনায় নিপুনতার পরিচয় দেন, বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।পরবর্তীকালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে নবযুগ নামে এক পত্রিকা শুরু করেন।তিনি দ্বৈপায়ন ছদ্মনামে নিয়মিত লিখে গেছেন , তার লেখায় ফুটে উঠেছে তৎকালীন সমাজে মানুষের আর্থিক দুর্দশার কথা এবং সেই দুর্দশা থেকে মুক্তির কথা।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন , ১৯২২ সালে কলকাতায় ভারত সাম্যতন্ত্র সমিতি গঠিত হয়।সেই সংগঠনে সম্পাদকের কাজ করেছেন তিনি।১৯২৪ সালেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের নজরে পড়ে যান , তার কাজকর্ম আটকাতে সচেষ্ট হয় প্রথম মামলায় অভিযুক্ত করে ব্রিটিশ সরকার।
১৭ ই মার্চ ১৯২৪ সালে এমএন রায় , এসএ ডাঙ্গে, মুজাফফর আহমেদ , নলিনী গুপ্ত, শওকত উসমানি , সিঙ্গারাভেলু চেত্তিয়ার , গুলাম হুসেন এবং অন্যান্যদের অভিযুক্ত করা হয়, যাকে কাউইনপুর (বর্তমানে কানপুর বলা হয় ) বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা বলা হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল যে তারা কমিউনিস্ট হিসাবে "এক বিপ্লবের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন থেকে ভারতকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ব্রিটিশ ভারতের রাজা সম্রাটকে তার সার্বভৌমত্ব থেকে বঞ্চিত করতে" চাইছিল।
এই মামলাটি ভারতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটাতে কমিন্টার্ন পরিকল্পনার প্রতি মানুষের আগ্রহকে আকৃষ্ট করে। ভারতে কমিউনিস্ট কর্মীদের বিচার হয়েছিল পেশোয়ারের মতো সীমান্তবর্তী শহরে যেখানে রাশিয়ান প্রশিক্ষিত মুহাজির কমিউনিস্টদের বিচার করা হয়েছিল। "কিন্তু কানপুর মামলার মতো কোনো মামলাই জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিন চাঞ্চল্যকর কমিউনিস্ট পরিকল্পনা ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ প্রথমবারের মতো কমিউনিজম এবং এর মতবাদ এবং ভারতে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের লক্ষ্য সম্পর্কে আকৃষ্ট করেছিল মানুষকে।
১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে তিনি কাজী নজরুল ইসলাম , হেমন্ত কুমার সরকার এবং অন্যান্যদের সাথে বাংলায় লেবার স্বরাজ পার্টি সংগঠিত করেন ।আবদুল হালিম এবং আবদুর রেজ্জাক খানের সাথে তিনি তিনি ১৯২০-এর দশকের গোড়ার দিকে সিপিআই-এর অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন ।
ব্রিটিশ সরকার স্পষ্টতই কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে চিন্তিত ছিল । এটাও নিশ্চিত করা হয়েছিল যে কমিউনিস্ট এবং সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার সমস্ত অনুপ্রবেশ শ্রমিকদের কাছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) দ্বারা প্রচারিত হয়েছিল। এর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য "একটি সাধারণ ধর্মঘট ও সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রতিটি দেশে (ভারত সহ) বিদ্যমান সরকারগুলিকে সম্পূর্ণ উৎখাত করা"। ব্রিটিশ সরকারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা।
মুজফ্ফর আহমেদ প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন, এসএ ডাঙ্গে, শওকত উসমানি, পিসি জোশী এবং অন্যান্যদের সাথে, এই তথাকথিত মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল । তিনি ১৯৩৬ সালে মুক্তি পান। তিনি মিরাট মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে দীর্ঘতম মেয়াদে কারাগারে ছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর , মুজফফর আহমেদ পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) থাকার পরিবর্তে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ মার্চ, ভারত সরকার কর্তৃক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করা হয় এবং আহমেদকে কারারুদ্ধ করা হয়। তিনি ১৯৫১ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান। তিনি আবার গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৬২ সালে দুই বছরের জন্য এবং ১৯৬৫ সালে আরেকবার দুই বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। স্বাধীনতা -পরবর্তী ভারতে কংগ্রেস সরকার তাকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেন।যাকে ব্রিটিশ সরকার ভয় পেত স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস সরকার ও ভয় পেয়েছে তাকে।
মতাদর্শের প্রতি নিষ্ঠা তাকে নিয়ে গেছে সংগঠনের অন্যতম সেনাপতি রূপেই, পার্টির মতাদর্শ প্রচারে বন্ধু খুঁজে গেছেন এবং সেই বন্ধুত্ব পার্টির প্রসারে ব্যাপকতা পায়।পার্টির মতাদর্শ তার জীবনে বন্ধুর মতোই পাশে থেকেছে এবং মননকে উন্নীত করার কাজ করতে সাহায্য করে গেছে।১৩৪ তম জন্মদিবসে দেশের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম সেনানী পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বর্তমানে শ্রমজীবী আন্দোলনের চিত্রপটকে ।





