পশ্চিম মেদিনীপুরে পাশ করেও শিক্ষকতার চাকরি পেতে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ! জীবনের ২৮ বছর সুদ আসলে মিটিয়ে দিয়ে গেল দাসপুরের তপন।
ইংরাজীতে অনার্স, লিখিত পরীক্ষা এমন কী ভাইভা দেওয়ার পর দেখা যায় ওয়েটিং লিস্টে নাম। চাকরি তো হবেই, আজ না হয় কাল! কিন্তু তারই মধ্যে আরও এক কাণ্ড। চাকরি পেতে হয় কালীঘাট নয় কাঁথি কোথাও একটা ফুল চড়াতেই হবে এমন দাবি নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে যায় এক দালাল। ২০১৯, তখন জেলায় জেলায় কাঁথির শাসন। দালাল বলল, চাকরির আগে ৫ আর চাকরির পরে ৫। মাত্র মোট ১০ লাখ ফেললেই চাকরি নিশ্চিত। তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিংবা মানিক ভট্টাচার্য্যদের জামানা।
হাইস্কুলে ৩০ আর প্রাথমিকে ১৬ লাখ অবধি রেট। সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি হয়। তাই দালালের কথায় ভরসা করেই মহাজনি ঋণ আর একাধিক মাইক্রোফাইনাস থেকে ঋণ নিয়ে ৫ লাখি ভেট চড়িয়েছিলেন। কিন্তু জালিয়াতির জটে থমকে নিয়োগ প্রক্রিয়া, সুদের ওপর সুদ বাড়তে বাড়তে এখন দেনা পাহাড় প্রমাণ। আসছে তাগাদার ওপর তাগাদা। শেষ অবধি সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেন এক ২৮ বছরের যুবক।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার সুপা এলাকার বলুড়ী গ্রামের ওই যুবকের নাম তপন দোলাই। তপনের দাদা সুকুমার দোলাই জানিয়েছেন, ” দিন মজুরি আর পাট্টা পাওয়া ১২কাঠা জমি চাষ করেই চলত আমাদের দিন। আমি আলাদা থাকতাম। ভাই থাকত বাবা মার সাথে। বাবার পাশাপাশি ভাইও দিনমজুরী করে ইংরেজী অনার্স নিয়ে ঘাটাল কলেজ থেকে পাশ করে। তারপর এস সি ফান্ডের টাকা সহ ধার দেনা করে কেশপুরের বকছড়াতে বিএড কলেজ থেকে বিএড পাশ করে। এস এস সি লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পর বিএড কলেজে সার্টিফিকেট আনতে গেলে সবাই জানতে পারে ভাই লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছে। তারপরই কেশপুরের এক দালাল যে নাকি স্থানীয় নেতা আমাদের বাড়িতে আসে। তখনকার তৃণমূলের দাপুটে মন্ত্রীরএ জেন্ট পরিচয় দিয়ে বলা হয় টাকা দিলে চাকরি মিলবে। অগ্রিম পাঁচ লক্ষ টাকা দাবী করা হয়। বলা হয় হলদিয়া গিয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে টাকা জমা দিতে হবে। কেশপুর থানার বিশ্বনাথপুর এলাকার ওই ব্যাক্তি ভাইকে সংগে করে নিয়ে গিয়েছিলেন হলদিয়াতে ৫লক্ষ টাকা জমা দিতে। ” শনিবার bমেদিনীপুর হাসপাতালে ভাইয়ের মৃতদেহের সামনে সাংবাদিকদের এমনই জানান তপন দোলইয়ের দাদা সুকুমার দোলই।
সুকুমার জানিয়েছেন,” পরিবারের পাট্টা জমি, বসত জায়গা বন্ধকী দিয়ে ঋণ নেয়। তপনের দিদি জামাই বাবুও তাদের জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নেয়, এছাড়া ৪টি মাইক্রো ফিনান্স সংস্থা থেকে ঋণ নেয় দুই পরিবার। মোট ৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে চাকরির জন্য। কিন্তু চাকরি হচ্ছিলনা দেখে মাঝখানে একবার কেশপুরের বিশ্বনাথপুর গ্রামে ওই এজেন্টের বাড়ী গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে ঐ দালাল লোক দিয়ে তপনকে তাড়িয়ে গ্রাম ছাড়া করায়। “এরপর আর পিছিয়ে পড়া তপশিলি জাতির পরিবারের ওই যুবক সাহস করে টাকা উদ্ধারের জন্য যায়নি।
আশা ছিল ওয়েটিং তালিকায় নাম যেহেতু আছে একদিন না একদিন চাকরি পেয়ে সব টাকা শোধ করে দেবে। কিন্তু এস এস সি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির ঘটনা আর বছরের পর বছর আটকে থাকা নিয়োগ। হতাশাগ্রস্থ তপন টিউশানি সহ দিন মজুরী করেও ঋণের সুদ, মহাজনী ঋণ মেটাতে না পেরে শেষ অবধি বৃহস্পতিবার রাতে কীট নাশক পান করে তপন। মাঝরাতে মেদিনীপুর শহরে এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার। শারিরীক অবস্থা অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে মেদিনীপুর মেডিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় ।শনিবার বেলা আড়াইটা নাগাদ মৃত্যু হয়।
.