" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory মার্ক্স বনাম হেগেল: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

মার্ক্স বনাম হেগেল: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা

 


মার্ক্স বনাম হেগেল: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা

শংকর পাল 

কার্ল মার্ক্স এবং জর্জ ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল দুজনেই দর্শনের জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাদের চিন্তাধারা আধুনিক দর্শন, রাজনীতি এবং সমাজবিজ্ঞানের গতিপথকে প্রভাবিত করেছে। যদিও হেগেলের দর্শন মূলত আদর্শবাদী এবং ধারণার বিকাশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, মার্ক্স হেগেলের দর্শনকে বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে রূপান্তরিত করেন। এই রূপান্তরের মাধ্যমে মার্ক্সের দর্শন আজকের দিনের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যাগুলি বুঝতে এবং সমাধান করতে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই নিবন্ধে আমরা মার্ক্স এবং হেগেলের দর্শনের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করব এবং দেখব কেন মার্ক্সের চিন্তাধারা আজও বেশি প্রাসঙ্গিক।


হেগেলের দর্শন: আদর্শবাদ এবং ডায়ালেক্টিক


হেগেলের দর্শনের মূল ভিত্তি হলো আদর্শবাদ (Idealism)। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বাস্তবতা হলো ধারণা বা চেতনার প্রকাশ। হেগেলের মতে, ইতিহাস হলো "বিশ্ব আত্মা" (World Spirit বা Geist) এর বিকাশের প্রক্রিয়া। এই বিকাশের মাধ্যমে মানবসভ্যতা ধাপে ধাপে অগ্রসর হয় এবং স্বাধীনতার ধারণা পূর্ণতা পায়। হেগেলের ডায়ালেক্টিক পদ্ধতি হলো একটি যুক্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া যেখানে দুটি বিপরীত ধারণা (থিসিস এবং অ্যান্টিথিসিস) সংঘর্ষের মাধ্যমে একটি উচ্চতর সমন্বয় (সিনথেসিস) তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজ এবং ইতিহাস এগিয়ে চলে।


হেগেলের দর্শন মূলত ধারণা এবং চেতনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তিনি মনে করতেন যে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটে ধারণার সংঘাত এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে। যদিও হেগেলের দর্শন অত্যন্ত গভীর এবং জটিল, এটি বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করে। হেগেলের দর্শন মূলত ব্যাখ্যামূলক; এটি বিশ্বকে বুঝতে সাহায্য করে কিন্তু পরিবর্তনের জন্য সরাসরি কোনো কর্মপন্থা প্রদান করে না।


মার্ক্সের দর্শন: বস্তুবাদ এবং বিপ্লবী পরিবর্তন


মার্ক্স হেগেলের দর্শন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি হেগেলের আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণে রূপান্তরিত করেন। মার্ক্সের মতে, ইতিহাসের চালিকাশক্তি হলো বস্তুগত অবস্থা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক। তিনি যুক্তি দেন যে সমাজের বিকাশ ঘটে শ্রেণীসংঘাতের মাধ্যমে। মার্ক্সের ডায়ালেক্টিক্যাল মেটেরিয়ালিজম (Dialectical Materialism) অনুসারে, সমাজের ভিত্তি হলো উৎপাদন ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক কাঠামো। এই ভিত্তির উপরেই সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলি (যেমন রাজনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি) গড়ে ওঠে।


মার্ক্সের মতে, পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক শ্রেণী (প্রলেতারিয়েত) এবং পুঁজিপতি শ্রেণী (বুর্জোয়া) এর মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকরা তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য পায় না এবং শোষণের শিকার হয়। মার্ক্সের দর্শনের মূল লক্ষ্য হলো এই শোষণমূলক ব্যবস্থাকে উৎখাত করা এবং একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। মার্ক্সের দর্শন কেবল ব্যাখ্যামূলক নয়, এটি পরিবর্তনমূলক। তিনি তত্ত্ব এবং অনুশীলনের (প্র্যাক্সিস) একতা প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিপ্লবী পরিবর্তনের আহ্বান জানান।


 মার্ক্সের প্রাসঙ্গিকতা: আজকের বিশ্বে


মার্ক্সের দর্শন আজকের বিশ্বে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য, শ্রমিক শোষণ এবং পরিবেশগত সংকট মার্ক্সের বিশ্লেষণকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আজকের বিশ্বে ধনী এবং গরীবের মধ্যে ব্যবধান ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং কর্পোরেট শক্তির প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠছে। মার্ক্সের দর্শন এই সমস্যাগুলি বুঝতে এবং সমাধান করতে একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রদান করে।


মার্ক্সের চিন্তাধারা শুধু তাত্ত্বিক নয়, এটি ব্যবহারিক। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দার্শনিকদের কাজ কেবল বিশ্বকে ব্যাখ্যা করা নয়, বরং এটি পরিবর্তন করা। এই দৃষ্টিভঙ্গি আজকের সামাজিক আন্দোলন এবং বিপ্লবী সংগ্রামগুলিকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। মার্ক্সের দর্শন শ্রমিক অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সমতার জন্য লড়াই করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।


 উপসংহার


হেগেল এবং মার্ক্স দুজনেই দর্শনের জগতে অমূল্য অবদান রেখেছেন। হেগেলের আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ধারণা এবং চেতনার বিকাশকে বুঝতে সাহায্য করে, কিন্তু মার্ক্সের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলি সমাধানে বেশি কার্যকর। মার্ক্সের দর্শন আজকের বিশ্বে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, কারণ এটি পুঁজিবাদ, শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রদান করে। মার্ক্সের চিন্তাধারা শুধু তত্ত্ব নয়, এটি একটি কর্মপন্থা যা বিশ্বকে পরিবর্তন করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এই কারণেই মার্ক্সের দর্শন আজও আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies