১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ইতিহাসের এক কালো দিন। এই দিনে ধর্মান্ধতার অন্ধকারে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল বিজ্ঞানের আলো। জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিয়োর্দানো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল শুধুমাত্র তার বৈজ্ঞানিক মতবাদের জন্য। পৃথিবী গোল, সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়—এই সত্য উচ্চারণ করাই ছিল তার অপরাধ। আজ আমরা স্মরণ করছি এই মহান বিজ্ঞানীকে, যিনি সত্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
ব্রুনোর জীবন ও আদর্শ
জিয়োর্দানো ব্রুনো ১৫৪৮ সালে ইতালির নাপোলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ব্রুনো কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক মতবাদকে সমর্থন করেছিলেন, যা তখনকার ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার মুখে পড়ে। ব্রুনো শুধু পৃথিবী ও সূর্য সম্পর্কেই কথা বলেননি, তিনি বিশ্বাস করতেন যে মহাবিশ্ব অসীম এবং এতে অসংখ্য নক্ষত্র ও গ্রহ রয়েছে। তার এই ধারণা তখনকার সময়ে বিপ্লবী ছিল।
ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা
ব্রুনোর মতবাদ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। ১৫৯২ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাত বছর ধরে বিচারকাজ চলে। ১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি, পোপ ৮ম ক্লেমেন্ট ব্রুনোকে ধর্মদ্রোহী বলে ঘোষণা করেন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারের সময় ব্রুনো বলেছিলেন, “আপনারা হয়তো আমার সাথে হেরে যাবার ভয়ে আমার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। আমি এটি গ্রহণ করলাম।"
মৃত্যুদণ্ড ও ব্রুনোর শেষ কথা
১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৬০০ সালে রোমের Campo de' Fiori বাজারে ব্রুনোকে খুঁটির সাথে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়। তার দেহভস্ম টিবের নদীতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে ব্রুনো কোনো আপোস করেননি। তিনি সত্যের পথে অটল ছিলেন এবং তার আদর্শের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন।
ব্রুনোর উত্তরাধিকার
ব্রুনোর মৃত্যুর পর তার মতবাদ ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পায়। আজ আমরা জানি যে পৃথিবী গোল, সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং মহাবিশ্ব অসীম। ব্রুনোর সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি প্রমাণ করেছেন যে সত্য কোনোদিন দমিয়ে রাখা যায় না।
আজকের প্রেক্ষাপটে ব্রুনোর শিক্ষা
ব্রুনোর জীবন আমাদের শেখায় যে সত্যের পথে চলতে গেলে অনেক বাধা আসবে, কিন্তু সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী। ধর্মান্ধতা ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে ব্রুনোর সংগ্রাম আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। তার জীবনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোয় অন্ধকার দূর করা সম্ভব।
উপসংহার
জিয়োর্দানো ব্রুনো শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি ছিলেন সত্যের পথের এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তার আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ তার প্রয়াণ দিবসে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই মহান ব্যক্তিত্বকে। সত্যের জয় হবেই, কারণ সত্য কোনোদিন মরে না। ব্রুনোর জীবনই তার প্রমাণ।