" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ভ্যালেন্টাইন'স ডে: প্রেমের উৎসব নিয়ে বিতর্ক ও উৎসাহ //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

ভ্যালেন্টাইন'স ডে: প্রেমের উৎসব নিয়ে বিতর্ক ও উৎসাহ

 



ভ্যালেন্টাইন'স ডে: প্রেমের উৎসব নিয়ে বিতর্ক ও উৎসাহ 

লেখক: শংকর পাল 

ভিউজ নাউ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


আজ ভ্যালেন্টাইন'স ডে। প্রেম ও ভালোবাসার এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে দেশজুড়ে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। ফুল, চকলেট, গ্রিটিং কার্ড আর উপহারের মাধ্যমে তারা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছে। তবে এই দিনটিকে ঘিরে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্কও কম নেই।  


ভ্যালেন্টাইন'স ডের ইতিহাস

ভ্যালেন্টাইন'স ডের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এটি শুরু হয়েছিল রোমান যুগে, যখন ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে লুপারকেলিয়া নামে একটি উৎসব পালন করা হতো। এই উৎসবটি ছিল কৃষি ও উর্বরতার দেবতা লুপারকাস এবং ফাউনাসের প্রতি উৎসর্গিত। এই উৎসবে যুবক-যুবতীরা লটারির মাধ্যমে একে অপরের সাথে জুটি বাঁধতেন, যা কখনও কখনও বিবাহে পরিণত হতো।  


খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের সাথে সাথে এই উৎসবটি  সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধুর স্মরণে পালন করা শুরু হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্পর্কে বেশ কয়েকটি কাহিনী প্রচলিত আছে:  

1. সেন্ট ভ্যালেন্টাইন অব রোম: তিনি ছিলেন একজন ধর্মযাজক, যিনি রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস দ্বিতীয়ের নির্দেশ অমান্য করে গোপনে যুবক-যুবতীদের বিয়ে পড়াতেন। সম্রাট মনে করতেন, অবিবাহিত যোদ্ধারা যুদ্ধক্ষেত্রে বেশি সাহসী হয়। এই অপরাধে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে বন্দী করা হয় এবং ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।  

2. ভালোবাসার চিঠি: কারাগারে থাকাকালীন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন জেলারের মেয়ের সাথে প্রেমে পড়েন। মৃত্যুর আগে তিনি তার প্রিয়তমাকে একটি চিঠি লেখেন, যার শেষে স্বাক্ষর করেন "তোমার ভ্যালেন্টাইন থেকে"। এই চিঠিই প্রথম ভ্যালেন্টাইন ডে কার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।  


৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন এবং লুপারকেলিয়া উৎসবের স্থান দখল করে নেয়।  


মধ্যযুগে ভ্যালেন্টাইন'স ডে  

মধ্যযুগে ভ্যালেন্টাইন'স ডে প্রেম ও রোমান্সের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইংরেজ কবি জেফ্রি চসার তার কবিতায় ভ্যালেন্টাইন'স ডেকে প্রেমের সাথে যুক্ত করেন। তার কবিতায় উল্লেখ করা হয় যে, ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে পাখিরা তাদের সঙ্গী বেছে নেয়। এই ধারণাটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভ্যালেন্টাইন'স ডে প্রেমের দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।  


১৫ শতকের দিকে ইংল্যান্ডে হাতে লেখা ভ্যালেন্টাইন কার্ডের প্রচলন শুরু হয়। এই কার্ডগুলোতে প্রেমের কবিতা ও বার্তা লেখা হতো।  


আধুনিক সময়ে ভ্যালেন্টাইন'স ডে 

১৮ ও ১৯ শতকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে বাণিজ্যিক রূপ লাভ করে। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় কার্ড, চকলেট এবং ফুলের ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। ১৮৪০ সালে এস্থার এ. হাওল্যান্ড আমেরিকায় প্রথম বাণিজ্যিক ভ্যালেন্টাইন কার্ড তৈরি শুরু করেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।  


বর্তমানে ভ্যালেন্টাইন'স ডে একটি বিশ্বব্যাপী উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরকে ফুল, চকলেট, কার্ড এবং বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকে। শপিং মল, রেস্তোরাঁ এবং ফুলের দোকানগুলো এই দিনটিকে ঘিরে বিশেষ আয়োজন করে। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, দক্ষিণেশ্বর মন্দির এবং অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে আজ তরুণ-তরুণীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।  


তবে এই দিনটিকে ঘিরে সমালোচনাও কম নেই। কিছু সংগঠন ও গোষ্ঠী মনে করেন, ভ্যালেন্টাইন'স ডে পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি অংশ, যা ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা এই দিনটির বিরোধিতা করে আসছেন এবং তরুণ প্রজন্মকে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করার আহ্বান জানাচ্ছেন।  একই সাথে, কিছু মানুষ এই দিনটিকে অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণের জন্য সমালোচনা করেন। তাদের মতে, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই, বরং প্রতিদিনই ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত।  


অন্যদিকে, যুবসমাজের একাংশ এই বিতর্ককে অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, "ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ দিন থাকা ভালো। এটি আমাদের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে।"  



ভ্যালেন্টাইন'স ডে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে। এটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যই নয়, বরং পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সকলের মধ্যে ভালোবাসা বিনিময়ের একটি সুযোগ। তবে এই দিনটিকে ঘিরে বিতর্ক থাকলেও, এটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে।  

ভালোবাসার এই দিনে সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।  


লেখক: শংকর পাল

ভিউজ নাউ, কলকাতা

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies