সোমালিয়ার প্রেসিডেন্টের কনভয়ে বোমা হামলা: অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ
মার্চ ১৮, ২০২৫, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে এক ভয়াবহ বোমা হামলা সংঘটিত হয়। প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদের কনভয়কে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। সোমালিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আল শাবাব এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। প্রেসিডেন্ট যখন সামরিক অভিযান তদারকি করতে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন, তখন প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছাকাছি এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রেসিডেন্ট অক্ষত থাকলেও প্রাণহানি ঘটেছে
প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ এই হামলা থেকে অক্ষতভাবে রক্ষা পান। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের স্থানে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিক খবরে জানা গেছে, ৩ থেকে ৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। হামলার আকস্মিকতায় পুরো এলাকা মুহূর্তেই আতঙ্কে ছেয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে আশপাশের ভবন কেঁপে ওঠে এবং ধোঁয়ায় ঢেকে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সোমালিয়ার সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে "নির্বিচার ও কাপুরুষোচিত" আখ্যা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের হামলা আল শাবাবের দুর্বলতা ও হতাশার পরিচায়ক। এক বিবৃতিতে বলা হয়, "এই হামলা আমাদের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার প্রতি আঘাত। তবে এমন কর্মকাণ্ড আমাদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না।"
আল শাবাবের ইতিহাস ও লক্ষ্য
আল শাবাব সোমালিয়ার একটি উগ্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী, যা ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করে। ২০১২ সালে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে সোমালিয়ার সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে এবং নিয়মিতভাবে সরকারি স্থাপনা ও কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করেছে।
প্রেসিডেন্টের ওপর হামলার প্রভাব
এই হামলা প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদের প্রতি একটি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমান মেয়াদে এটি তার কনভয়কে লক্ষ্য করে প্রথম বড় আক্রমণ। তার আগের প্রেসিডেন্ট মেয়াদেও আল শাবাব তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আক্রমণ আল শাবাবের দুর্বলতা নয়, বরং তাদের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতার প্রতিফলন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মোগাদিশুতে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে সোমালিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও সোমালিয়ার সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে।
সোমালিয়ার সামরিক অভিযান
বর্তমানে সোমালিয়ার সামরিক বাহিনী আল শাবাবের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। বিশেষ করে মধ্য শাবেল অঞ্চলে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সরকারের মতে, এই অভিযানের লক্ষ্য হল আল শাবাবের ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা এবং দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের প্রভাব নির্মূল করা। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে বেশ কিছু আল শাবাব যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। তবে এই অভিযানে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও হতাহত হয়েছেন।
উপসংহার
সোমালিয়ার জন্য এই হামলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রেসিডেন্ট ও তার সরকারকে একদিকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হচ্ছে। আল শাবাবের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অভ্যন্তরীণ সংহতির প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। তবে প্রেসিডেন্ট মোহামুদের বেঁচে যাওয়া একটি বার্তা পাঠিয়েছে—সোমালিয়া ভয় পায় না এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম থেমে থাকবে না।