দুর্গাপুর, ২ মার্চ ২০২৫ (রবিবার):
আজ দুর্গাপুর ইস্পাত বিদ্যালয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলা চতুর্দশ সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হলো। সারা দিনব্যাপী এই সম্মেলন বিজ্ঞানচর্চা, কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলন, পরিবেশ রক্ষা এবং সমাজে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারের উপর আলোকপাত করে।
সম্মেলনের সূচনা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
সকাল ৯.৩০টায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। এরপর লহরীর সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্মৃতিবেদিতে মাল্যদান করে বিজ্ঞান আন্দোলনে অবদান রাখা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
উপস্থিত বিশিষ্টজনরা:
- শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায় (জেলা সভাপতি)
- অধ্যাপক সত্যজিৎ চক্রবর্তী (রাজ্য কার্যকরী সভাপতি)
- অধ্যাপক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (পূর্ব বর্ধমান জেলার কার্যকরী সভাপতি)
- তনুশ্রী চক্রবর্তী (রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য)
- ডাঃ তাপস কুমার ভৌমিক (জেলা উপদেষ্টা)
প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ
সম্মেলনে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে ১৭১ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সরাসরি বিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ১৩৩ জন। আলোচনায় অংশ নেন ২০ জন প্রতিনিধি।
উপস্থিতি ও প্রতিনিধিত্ব:
- মোট ১২৫ জন পুরুষ সদস্য এবং ৩৪ জন মহিলা সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
- সবচেয়ে বয়স্ক প্রতিনিধি: অসীম কুমার ভদ্র (৮১ বছর), অন্ডাল বিজ্ঞান কেন্দ্র।
- সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিনিধি: ঈশান কর্মকার (১৫ বছর), অন্ডাল বিজ্ঞান কেন্দ্র।
১৫৯ জন প্রতিনিধির মধ্যে ১১৫ জন একাধিকবার রক্তদান করেছেন। সর্বাধিক রক্তদানকারী কল্লোল ঘোষ, যিনি ৭২ বার রক্তদান করেছেন।
নতুন জেলা কমিটি গঠন
সম্মেলনে ৫৩ সদস্যের একটি নতুন জেলা কমিটি গঠিত হয়। এর মধ্যে ১৭ জন নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিতরা:
- সভাপতি: শ্রীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
- সম্পাদক: কল্লোল ঘোষ
- কার্যকরী সভাপতি: অরুণ কিরণ চ্যাটার্জি
দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সদস্যদের নাম পরবর্তীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মূল আলোচনার বিষয়বস্তু ও প্রস্তাব
১. জাতীয় শিক্ষানীতি:
বক্তারা বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানান। এর ফলে বিজ্ঞানচর্চা এবং শিক্ষার গুণগত মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
২. মেধা অভিক্ষা পরীক্ষা:
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা জনপ্রিয় করতে মেধা অভিক্ষা পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়।
৩. পরিবেশ রক্ষা:
দামোদর নদীর সংস্কার আন্দোলনের গুরুত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
৪. স্বাস্থ্য পরিষেবা:
জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ওঠে।
জনপ্রিয় কর্মসূচি:
বিজ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত জনপ্রিয় কর্মসূচি:
1. বৃক্ষরোপণ
2. বিজ্ঞান মেধা পরীক্ষা
3. বিজ্ঞানের নাট্যমেলা
4. জনবিজ্ঞান
5. আকাশ পর্যবেক্ষণ
6. বিজ্ঞান কুইজ
7. শিশু বিজ্ঞান
8. কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান
9. রান্নাঘরের বিজ্ঞান
10. হাতে কলমে বিজ্ঞান
বিশেষ প্রস্তাবনা:
১. অলৌকিক নয়, লৌকিক জাদু:
মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে অলৌকিকতার মিথ ভাঙার জন্য প্রোগ্রাম।
২. সাইন্স টক:
- বিজ্ঞানীরা সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন।
- জটিল বৈজ্ঞানিক ধারণা সহজ ভাষায় বোঝাবেন।
- এটি ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের জন্য উপকারী হবে।
বিজ্ঞান কর্মসূচি ও প্রদর্শনী
সম্মেলনে বিজ্ঞানমনস্কতা প্রসারে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়:
- বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
- বিজ্ঞান কুইজ
- অলৌকিক নয়, লৌকিক জাদু বিষয়ক প্রদর্শনী
- রান্নাঘরের বিজ্ঞান
- কুসংস্কার বিরোধী আলোচনা
- শিশু বিজ্ঞান কর্মশালা
সমাপ্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিকাল ৫.৩০টায় সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সম্পাদক কল্লোল ঘোষ। তিনি বলেন, "এই সম্মেলন শুধু বিজ্ঞান আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি নয়, এটি সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"
তিনি আরও জানান, নবগঠিত জেলা কমিটি আগামী দিনে বিজ্ঞান চর্চা, পরিবেশ সচেতনতা এবং কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের এই সম্মেলন বিজ্ঞান আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।














