আসানসোলে বাম গণসংগঠনের সুবিশাল মিছিল: জেলা শাসক ঘেরাও অভিযানে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
আসানসোল, ৮ এপ্রিল: আজ আসানসোলে বাম গণসংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো জেলা শাসক ঘেরাও অভিযান। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে আসানসোলের রাজপথ। মিছিলকারীদের প্রধান দাবি ছিল, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির অবসান এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
মিছিলের চিত্র: প্রতিবাদের নতুন বার্তা
ভোর থেকেই আসানসোলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন জড়ো হতে শুরু করেন। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-যুব, মহিলা সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে শুরু হয়ে জেলা শাসকের দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছায়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেই প্রতিবাদকারীদের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের হাতে ছিল দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, এবং মুখে ছিল স্লোগান—“দুর্নীতির রাজ শেষ করো, মানুষের অধিকার রক্ষা করো।”
বাম নেতৃত্বের বক্তব্য
মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি, আভাস রায় চৌধুরী সহ বামপন্থী নেতৃত্ব। মীনাক্ষী মুখার্জি তার বক্তব্যে বলেন, “রাজ্যজুড়ে দুর্নীতি এক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। আজকের আন্দোলন কেবলমাত্র আসানসোলের নয়, এটি গোটা রাজ্যের মানুষের জন্য এক প্রতিবাদের বার্তা। তৃণমূল সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই—যদি দুর্নীতি বন্ধ না হয়, তবে মানুষই এর জবাব দেবে।”
সিআইটিইউ-এর পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক বংশ গোপাল চৌধুরী বলেন, “আজকের মিছিল শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি শাসকের উদ্দেশ্যে এক চরম বার্তা। শ্রমিকদের অধিকার, বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু করা এবং মহার্ঘ ভাতা প্রদানের মতো বিষয়গুলিকে রাজ্য সরকার উপেক্ষা করছে। এই উপেক্ষা আর চলতে দেওয়া হবে না।”
সিপিআইএম পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চাটটার্জি বলেন, “এই সংগ্রাম রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে। রাজ্যের প্রতিটি জায়গায় লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা শাসকের দুর্নীতির জাল ভাঙবো।”
মিছিলে সাধারণ মানুষের দাবি
মিছিলে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষেরাও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একজন চাকরিহারা যুবক বলেন, “প্রতিদিন চাকরির বাজারে দুর্নীতির খবর শুনি। আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই মিছিল আমাদের মত সাধারণ মানুষের একমাত্র আশা।” একজন মহিলা বলেন, “দুর্নীতি এমনভাবে গ্রাস করেছে যে ১০০ দিনের কাজের টাকা পর্যন্ত পাইনি। এই আন্দোলন আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবে।”
তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি: লাগাতার আন্দোলনের ডাক
আজকের মিছিল থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, এই প্রতিবাদ এখানেই শেষ নয়। বাম নেতৃত্বের দাবি, রাজ্যের প্রতিটি জেলা ও ব্লকে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এই লড়াই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বামপন্থীদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তৃণমূল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের বঞ্চনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমানসে যে ক্ষোভ জমা হয়েছে, তা আজকের মিছিলের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
উপসংহার
আজকের মিছিল শুধুমাত্র বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় নয়, এটি রাজ্যের সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রতিধ্বনি। আসানসোলের রাজপথে আজ উচ্চারিত স্লোগান যেন শাসকের উদ্দেশ্যে মুক্তির গর্জন। এই প্রতিবাদ ভবিষ্যতে রাজ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সকলে।