চে গুয়েভারা: যার আদর্শ আজও প্রেরণা জোগায়
- একটি জীবনদর্শনের গল্প
ভূমিকা
ইতিহাসে কিছু নাম এমনভাবে অমর হয়ে থাকে যে সময়ের স্রোতেও তা ম্লান হয় না। এর্নেস্তো "চে" গুয়েভারা (১৯২৮-১৯৬৭) এমনই এক নাম, যা কেবল একজন মানুষের নয়, একটি আদর্শের প্রতীক। আজও তাঁর জীবন ও সংগ্রাম কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রেরণা সঞ্চার করে।
প্রথম পর্ব: শৈশব থেকে যুবক
চে গুয়েভারা ১৯২৮ সালের ১৪ই জুন আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি হাঁপানিতে ভুগতেন, কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা কখনোই তাঁর মনোবলকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। মেডিকেল স্কুলে পড়ার সময় তিনি লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণে তিনি দেখেন দারিদ্র্য, শোষণ ও বৈষম্যের নির্মম রূপ। এক ডাক্তার হিসেবে নয়, একজন সংগ্রামী হিসেবে মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
দ্বিতীয় পর্ব: কিউবার বিপ্লব
১৯৫৫ সালে মেক্সিকোতে ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। এই সাক্ষাৎই তাঁকে কিউবার বিপ্লবের পথে নিয়ে যায়। ১৯৫৬ সালে গ্রানমা জাহাজে করে কিউবায় প্রবেশ করেন ৮২ জন বিপ্লবী। প্রথম আক্রমণেই বেশিরভাগ বিপ্লবী শহীদ হন, কিন্তু চে ও ফিদেল সহ কয়েকজন বেঁচে যান। পাহাড়ে লুকিয়ে থেকে তারা গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন।
চে শুধু একজন যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন কৌশলী নেতা। সান্তা ক্লারার যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে বিপ্লবীরা বিজয়ী হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটে।
তৃতীয় পর্ব: বিপ্লব পরবর্তী জীবন
বিপ্লবের পর চে কিউবার জাতীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার, শিক্ষা প্রসার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল শুধু কিউবা নয়, সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের মুক্তি।
চতুর্থ পর্ব: আন্তর্জাতিক সংগ্রাম ও মৃত্যু
১৯৬৫ সালে চে কিউবা ছেড়ে কঙ্গো ও পরে বলিভিয়ায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু বলিভিয়ায় স্থানীয় কৃষক ও সরকারের সমর্থন না পাওয়ায় তিনি孤立 হয়ে পড়েন। ১৯৬৭ সালের ৮ই অক্টোবর বলিভিয়ার সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে এবং পরের দিন হত্যা করে।
মৃত্যুর সময় তাঁর শেষ কথাগুলো ছিল:
"গুলি করো! ভয় পেয়ো না! তুমি শুধু একজন মানুষকে হত্যা করছ!"
পঞ্চম পর্ব: চে'র উত্তরাধিকার
চে গুয়েভারা শুধু একজন বিপ্লবী নন, তিনি একটি আদর্শ। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়:
ন্যায়ের জন্য লড়াই করতে হবে
স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার সেবা করতে হবে
কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না
আজও বিশ্বজুড়ে তাঁর ছবি প্রতিবাদ ও সংগ্রামের প্রতীক। প্যালেস্টাইন থেকে বাংলাদেশ, যেখানেই শোষণ ও অবিচার আছে, সেখানেই চে'র আদর্শ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।