মুম্বাই, ২১ জুলাই, ২০২৫: ২০০৬ সালের ১১ই জুলাই মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক বোমা হামলায় ১৮৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ১৮ বছর পর, আজ বোম্বে হাইকোর্ট এই মামলায় অভিযুক্ত ১২ জনকেই বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। প্রমাণের অভাবে এবং সাক্ষীর বয়ানের অবিশ্বস্ততা ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে, যা ভারতের বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
২০০৬ সালের সেই ভয়াবহ হামলায় মুম্বাইয়ের ৭টি লোকাল ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে মহারাষ্ট্র অ্যান্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড (ATS) এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং দাবি করে যে বোমা তৈরিতে RDX ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে, সেই সময় থেকেই ফরেনসিক প্রমাণের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, যা পরে আদালতের রায়েও প্রতিফলিত হয়েছে।
হামলার সময় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল এবং প্রাথমিক সন্দেহের তীর ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI)-এর দিকে নির্দেশ করা হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ধারণা তুলে ধরেছিল। তবে, ২০০৮ সালে একজন স্থানীয় সন্দেহভাজনের স্বীকারোক্তি, যা অনুযায়ী প্রেসার কুকার বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, ঘটনার আখ্যানকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
বোম্বে হাইকোর্টের আজকের রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি কাঠামোগত ত্রুটি তুলে ধরেছে। ১৮ বছর ধরে বিনা প্রমাণে অভিযুক্তদের কারাবাস, পরে যাদের নির্দোষ ঘোষণা করা হলো, তা ভারতীয় অ্যান্টি-টেরোরিজম ফ্রেমওয়ার্কের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ২০১৯ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) রিপোর্ট সহ বিভিন্ন গবেষণায় ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনাগুলি প্রায়শই উঠে এসেছে, যা এই মামলার প্রেক্ষাপটে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
এই রায়টি শুধু অভিযুক্তদের দীর্ঘদিনের কারাবাসের অবসান ঘটায়নি, বরং ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় আরও গভীর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত মামলাগুলির ক্ষেত্রে যেখানে দ্রুত এবং ত্রুটিহীন প্রমাণের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদান অপরিহার্য।