" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory গণপ্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব: চীনের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায় China's Historic Transformation: The Cultural Revolution - A Great Proletarian Awakening //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

গণপ্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব: চীনের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায় China's Historic Transformation: The Cultural Revolution - A Great Proletarian Awakening



চীনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় গণজাগরণ, যা "মহান প্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব" নামে পরিচিত, তা ছিল ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত এক যুগান্তকারী আন্দোলন। চীনের দূরদর্শী নেতা, কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে এই বিপ্লব পুরনো ধ্যান-ধারণা ঝেড়ে ফেলে এক নতুন চীন গড়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদের অপশক্তি ও সমাজের ক্ষয়িষ্ণু ঐতিহ্যবাদী উপাদানগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে 'প্রকৃত' কমিউনিস্ট আদর্শকে সুসংহত করা, বিপ্লবী চেতনাকে নতুন করে জাগ্রত করা এবং সমগ্র চীনজুড়ে মাওয়ের বিপ্লবী চিন্তাধারাকে প্রতিষ্ঠিত করা।


এক নতুন চীনের পথে যুবশক্তির জাগরণ:


মাও সেতুং অনুধাবন করেছিলেন যে, সমাজের অভ্যন্তরে বুর্জোয়া চিন্তাধারা এবং পার্টির কিছু অংশে এলিটতন্ত্রের প্রভাব মাথাচাড়া দিচ্ছে, যা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি দেশের তরুণ প্রজন্মকে আহ্বান জানান এক নতুন সমাজতান্ত্রিক চেতনার উন্মোচনে। মাওয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী 'রেড গার্ডস' (লাল রক্ষী) নামে বিপ্লবী বাহিনী গঠন করে। এই তরুণ বিপ্লবীরা মাওয়ের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে বিপ্লবী শুদ্ধি অভিযান শুরু করে।

রেড গার্ডসরা সমাজের সেইসব উপাদানকে চিহ্নিত করে, যা পুরাতন ও প্রগতিবিরোধী ছিল। তারা 'চার পুরনো' - পুরনো ধারণা, পুরনো সংস্কৃতি, পুরনো রীতিনীতি এবং পুরনো অভ্যাস - নির্মূলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সাহসী অভিযান পুরনো জঞ্জাল সরিয়ে এক নতুন, সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটায়। এটি ছিল মেহনতি মানুষের সংস্কৃতিকে সমাজের কেন্দ্রে নিয়ে আসার এক বিপ্লবী পদক্ষেপ। পুরনো ধ্যান-ধারণার শৃঙ্খল ভেঙে নতুন চেতনার উন্মোচন ঘটে, যা চীনের সমাজকে এক নতুন দিশা দেখায়।



বিপ্লবী পরিবর্তন ও জনমানুষের ক্ষমতায়ন:


সাংস্কৃতিক বিপ্লব দ্রুতই দেশজুড়ে এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছিল, তবে এটি ছিল একটি বৃহত্তর বিপ্লবী প্রক্রিয়ার অংশ, যার মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একত্রিত করা হয়। রেড গার্ডদের সাহসী পদক্ষেপ সমাজের প্রতি স্তরে বিপ্লবী চেতনাকে জাগিয়ে তোলে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত বা পুরাতনপন্থী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসে। এটি ছিল এক বিশাল রাজনৈতিক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টিকে তার মূল আদর্শে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

এই বিপ্লব সাধারণ মানুষকে ক্ষমতায়নের এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়। কৃষক ও শ্রমিকরা নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ পায়। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিপ্লবী পরিবর্তন আসে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেহনতি মানুষের সন্তানদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার পদ্ধতিকে আরও ব্যবহারিক ও জনমুখী করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে, জ্ঞান শুধু মুষ্টিমেয় এলিটদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়বে।



নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও বিপ্লবী উত্তরাধিকার:


মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে এই বিপ্লব চীনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক মৌলিক পরিবর্তন আনে। কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, যারা পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, তাদের সরিয়ে দিয়ে পার্টির মধ্যে বিপ্লবী শক্তিকে সুসংহত করা হয়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা গিয়েছিল, তবে মাওয়ের সুদূরপ্রসারী নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে সঠিক পথে চালিত করে এবং চূড়ান্তভাবে সমাজতান্ত্রিক চীনকে আরও শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করায়।

১৯৭৬ সালে মাওয়ের প্রয়াণের পর সাংস্কৃতিক বিপ্লব তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থেকে সরে এলেও, এর বিপ্লবী চেতনার রেশ চীনের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি চীনকে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে এবং একটি স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। সাংস্কৃতিক বিপ্লব চীনের জনমানুষকে একত্রিত করে এক নতুন আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল, যা আজও চীনের প্রগতির মূলে কাজ করছে। এই বিপ্লব কেবল চীনের নয়, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কাছেও এক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, যা প্রমাণ করে যে একটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জাতি কীভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies