১. ভূমিকা: পরিযায়ী শ্রমিকের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রাজ্যের একটি গভীর আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা। সাম্প্রতিককালে, অন্যান্য রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের হয়রানি, আটক বা জোরপূর্বক নির্বাসনের অভিযোগগুলি এই সমস্যাটিকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে 1। ওড়িশা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু এবং ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যগুলিতে এমন ঘটনাগুলি রাজ্য সরকার এবং শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে সক্রিয় হতে বাধ্য করেছে। এই পরিস্থিতি পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের দুর্দশা মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এই সমস্যাটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি মানবাধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ও বটে। অন্যান্য রাজ্যে শ্রমিকদের হয়রানির ঘটনাগুলি রাজ্যের বাইরে বাঙালি শ্রমিকদের দুর্বলতা এবং তাদের জন্য একটি শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। এই ঘটনাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কেবল কাজের সুযোগের অভাবই নয়, তাদের আন্তঃরাজ্য চলাচলের সময় আইনি এবং সামাজিক সুরক্ষারও অভাব রয়েছে। এটি একটি 'পরিযায়ী পরিচয়' তৈরি করে যা তাদের আরও প্রান্তিক করে তোলে 4। এই সমস্যা মোকাবেলায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগ, যেমন হেল্পলাইন চালু করা, মানবিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মূল কারণগুলি সমাধান না হলে এই সমস্যা চলতেই থাকবে।
এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য হলো বামফ্রন্ট (১৯৭৭-২০১১) এবং তৃণমূল কংগ্রেস (২০১১-বর্তমান) উভয় সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের ডেটা, নীতি এবং প্রবণতার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রদান করা। এর মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জের উপর আলোকপাত করা হবে, যা এই পরিযায়ী প্রবণতার মূল চালিকাশক্তি। সাম্প্রতিক দুর্দশার খবরগুলি কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ আকারের, চলমান পরিযায়ী প্রবণতার লক্ষণ যা একটি সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সরকারকে সমস্যাটি স্বীকার করতে এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করেছে। যদি সমস্যাটি ছোটখাটো হত, তবে এত বিস্তৃত প্রতিবেদন এবং একটি বহুস্তরীয় সরকার/দলীয় প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন হত না। অতএব, এই সংকট কেবল ব্যক্তিগত শ্রমিকদের নিয়ে নয়, বরং এটি একটি পদ্ধতিগত, বৃহৎ আকারের পরিযায়ী প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২. বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পরিযায়ী শ্রমিকের চিত্র (১৯৭৭-২০১১)
বামফ্রন্ট সরকার ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তাদের দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনামলে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে, যা প্রাথমিকভাবে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন থেকে ধীরে ধীরে শিল্পায়নের দিকে মোড় নেয়।
২.১ নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি: উদ্বাস্তু পুনর্বাসন থেকে শিল্পায়নের দিকে পরিবর্তন
স্বাধীনতার পর, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের সমস্যা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (CPI), যা বামফ্রন্টের একটি প্রধান উপাদান ছিল, তাদের নির্বাচনী প্রচারণার একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে 5। তারা উদ্বাস্তুদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছিল এবং কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে রাজ্যের বাইরে, যেমন দণ্ডকারণ্যে, উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য সমালোচনা করেছিল 5। ১৯৬৭ সালের ইশতেহারে, CPI(M) গঠনের পর, "উদ্বাস্তুদের টেকসই পুনর্বাসন"-এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে ক্যাম্প এলাকার খারাপ অবস্থা এবং কলোনিগুলির বৈধতার বিষয়টি তুলে ধরা হয় 5।
১৯৭৭ সালে ভূমি সংস্কার এবং পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামীণ সরকারের বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোর দিয়ে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। প্রাথমিকভাবে উদ্বাস্তুদের জন্য সঠিক পুনর্বাসন নীতি তৈরি করা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ ছিল। তবে, ১৯৭৯ সালের মে মাসে সংঘটিত মরিচঝাঁপি গণহত্যা এই নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসে 5। এই ঘটনা, যেখানে দলিত পূর্ববঙ্গীয় উদ্বাস্তুরা নিহত হয়েছিল, বামফ্রন্ট সরকারের দায়বদ্ধতা বাড়াতে অনীহা নির্দেশ করে, বিশেষত দলিত (মতুয়া) সম্প্রদায়ের ভূমিহীন কৃষকদের বিষয়ে 5। সমালোচকরা সিপিআই(এম)-কে মধ্যবিত্তের দল হিসেবে অভিযুক্ত করেন, যারা ভূমিহীন দরিদ্র উদ্বাস্তু এবং শরণার্থী শিবিরের স্বাস্থ্যসেবা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে উদাসীন ছিল 5।
পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে, বিশেষ করে ২০০১ এবং ২০০৬ সালে, উদ্বাস্তু প্রশ্নটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার "সুশাসন" এবং "শিল্পায়নের" উপর জোর দিয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল অভ্যন্তরীণ শ্রমিকের বহির্গমন রোধ করা; তাদের ইশতেহারগুলিতে উদ্বাস্তুদের কথা খুব কমই উল্লেখ ছিল 5। এই নীতিগত পরিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে, প্রাথমিকভাবে মানবিক ও রাজনৈতিক কারণে উদ্বাস্তু সমস্যার উপর জোর দেওয়া হলেও, অর্থনৈতিক বাস্তবতার চাপে এবং সম্ভবত রাজনৈতিক সুবিধার জন্য (যেমন মরিচঝাঁপি ঘটনার পর দায়বদ্ধতা এড়ানো), তাদের মনোযোগ শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে সরে যায়। এটি তাদের "কৃষক-বান্ধব" ভাবমূর্তি থেকে সরে আসার একটি লক্ষণ ছিল।
বামফ্রন্টের নীতিগত পরিবর্তন, বিশেষ করে শিল্পায়নের উপর জোর দেওয়া এবং ভূমি অধিগ্রহণের বিতর্ক, গ্রামীণ কর্মসংস্থানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। যদিও তাদের উদ্দেশ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, কিন্তু বাস্তবায়ন ত্রুটি এবং জনবিক্ষোভের কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এর ফলে, কর্মসংস্থানের অভাবে মানুষ বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতে বাধ্য হয়, যা পরিযায়ী প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে। বামফ্রন্টের শিল্পনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী ব্যর্থতা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অক্ষমতা পরিযায়ী প্রবণতার একটি প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। এই প্রবণতা তৃণমূলের আমলে তীব্রতা লাভ করলেও, এর বীজ বামফ্রন্টের শাসনের শেষ দিকেই রোপিত হয়েছিল। এটি একটি ধারাবাহিক অর্থনৈতিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, যা কেবল একটি সরকারের ব্যর্থতা নয়, বরং দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা।
২.২ অর্থনৈতিক কারণ ও কর্মসংস্থানের অভাব: পরিযায়ী প্রবণতার মূল চালিকাশক্তি
বামফ্রন্ট সরকারের দীর্ঘ শাসনে রাজ্যে শিল্পের দুর্দশার জন্য তাদের "দুর্বল কর্মসংস্কৃতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শাসনের ব্যর্থতা" কে দায়ী করা হয়, যা বেসরকারি বিনিয়োগকে দূরে সরিয়ে দেয় 7। যদিও পশ্চিমবঙ্গের শিল্প পতন স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছিল, বামফ্রন্টের শাসনামলে এটি এটিকে থামাতে পারেনি 7। রেলওয়ে বাজেটের সংকোচন এবং পাট ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের পতন রাজ্যে কর্মসংস্থানের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল 7।
বামফ্রন্ট শাসনের শেষ দিকেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী প্রবণতার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় 8। ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দশকে, আনুমানিক ১ লক্ষ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী হয়েছিল 8। এই সময়ের পরিযায়ীতার প্রধান কারণগুলি ছিল: রাজ্যে তরুণদের জন্য চাকরির তীব্র অভাব, স্থানীয় শিল্পে কম মজুরি (যেমন চা শিল্প), যা জীবিকা নির্বাহে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, অন্যান্য রাজ্যে (যেমন মহারাষ্ট্র, গুজরাট, এবং দক্ষিণ অঞ্চল) অনেক বেশি মজুরি এবং উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ, দৈনিক মজুরি শ্রমিকদের জন্য অসঙ্গত বেতন, রাজ্যে গ্রামীণ চাকরির অভাব এবং সরকারি চাকরির নিয়োগে দুর্নীতি 8।
এই ১ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক একটি 'টিপিং পয়েন্ট'-এর ইঙ্গিত দেয়। এটি কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপের লক্ষণ, যা পরবর্তীকালে আরও বড় সংকটে পরিণত হয়। এটি প্রমাণ করে যে পরিযায়ী সমস্যাটি তৃণমূলের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়নি, বরং বামফ্রন্টের আমলে এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।
সারণী ১: বামফ্রন্ট আমলে পরিযায়ী শ্রমিকের আনুমানিক সংখ্যা ও মূল কারণ (২০০১-২০১১)
এই সারণীটি বামফ্রন্ট আমলের পরিযায়ীতার ডেটা এবং কারণগুলিকে একত্রিত করে একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। এটি সরকারের নীতিগত অবস্থান এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্যেকার সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে, যা পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসের আমলের সাথে তুলনার জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করে।
৩. তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে পরিযায়ী শ্রমিকের চিত্র (২০১১-বর্তমান)
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যায় এক নাটকীয় বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। এই বৃদ্ধি একদিকে যেমন রাজ্যের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের গভীরতা তুলে ধরে, তেমনি অন্যদিকে সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং নীতিগত পদক্ষেপগুলিকেও সামনে নিয়ে আসে।
৩.১ পরিযায়ী প্রবণতার তীব্র বৃদ্ধি: ডেটা ও পরিসংখ্যান
গত দুই দশকে জীবিকার সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যান্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে 8। ২০১০-এর দশকে রাজ্য থেকে মানুষের নেট বহির্গমন, রাজ্যে আগত মানুষের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে 8। বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে সংকটের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেলেও, বর্তমান সরকারের অধীনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে 8।
সংখ্যাগতভাবে, ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে যেখানে ১ লক্ষ মানুষ পরিযায়ী হয়েছিল, সেখানে ২০১১ সালের পরের আট বছরে এই সংখ্যা ১১ লক্ষে (১.১ মিলিয়ন) পৌঁছেছে 8। কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে রাজ্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১০.৫ লক্ষ (১.০৫ মিলিয়ন) মানুষকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে 8। তবে, পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়ন (WBMWU) দ্বারা পরিচালিত একটি প্রাথমিক রাজ্যব্যাপী সমীক্ষায় ৬০ লক্ষ (৬ মিলিয়ন) এরও বেশি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা অন্যান্য রাজ্যে পরিযায়ী হয়েছে 8। ২৯ জুলাই, ২০২৫ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই উল্লেখ করেন যে প্রায় ২২ লক্ষ (২.২ মিলিয়ন) পরিযায়ী শ্রমিক অন্যান্য রাজ্যে কাজ করছেন 10। এই তথ্যের মধ্যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে সরকারি পরিসংখ্যান বাস্তবতার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম হতে পারে। যদি সরকার সমস্যাটিকে কম অনুমান করে, তবে তার সমাধানগুলি অপর্যাপ্ত হতে পারে। WBMWU-এর একজন কার্যকর্তা আসাদুল্লাহ গায়েন উল্লেখ করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গের অনেক গ্রামে পুরো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ জনসংখ্যা কাজের জন্য অন্যান্য রাজ্যে চলে গেছে, যা নজিরবিহীন 8।
৩.২ রাজ্য সরকারের উদ্যোগ ও কল্যাণমূলক প্রকল্প
বাঙালি শ্রমিকদের হয়রানি, আটক বা জোরপূর্বক নির্বাসনের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস সরকার একটি বহুস্তরীয় উদ্যোগ নিয়েছে 1। এটি প্রশাসনিক তৎপরতা এবং রাজনৈতিক প্রচারের মিশ্রণ।
সরকারি উদ্যোগসমূহ:
হোয়াটসঅ্যাপ-ভিত্তিক হেল্পলাইন: পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ একটি হোয়াটসঅ্যাপ-ভিত্তিক হেল্পলাইন চালু করেছে যাতে দুর্দশাগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারগুলি পাঠ্য-ভিত্তিক অভিযোগ পাঠাতে পারে 2। এটি যাচাইকৃত রিপোর্টিংয়ের অনুমতি দেয়, যার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ অন্যান্য রাজ্যের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে 2।
পুনরুজ্জীবিত জেলা-স্তরের পরিযায়ী কল্যাণ সেল: পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড জেলা পরিযায়ী সেলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করছে, যার মধ্যে অনেকগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নিষ্ক্রিয় ছিল। এতে নতুন কর্মী নিয়োগ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে সরাসরি সমন্বয় লাইন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে 2।
পরিযায়ী ক্লাস্টার ম্যাপিং: বোর্ড সক্রিয়ভাবে ভারতজুড়ে প্রধান বাঙালি পরিযায়ী ক্লাস্টারগুলি ম্যাপিং করছে এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত ও দলীয় কমিটিগুলির ইনপুটগুলির সাথে এই ডেটা একত্রিত করছে 2।
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড গঠন: রাজ্য সরকার এই বোর্ড গঠন করেছে সম্ভাব্য পরিযায়ী শ্রমিকদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের রাজ্যে থাকতে উৎসাহিত করার জন্য 8।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অ্যাপ: পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যারা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি অ্যাপ চালু করেছে 8।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ফিরে আসতে ইচ্ছুক পরিযায়ী শ্রমিকদের "সামাজিক সুরক্ষা" এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি রেশন কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড এবং কর্মশ্রী প্রকল্পের অধীনে কাজের প্রস্তাব দিয়েছেন 12। তিনি কর্মকর্তাদের ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন 10।
রাজ্যে কর্মসংস্থান: সরকার উচ্চ-পরিযায়ী অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে 2।
তৃণমূল দলীয় উদ্যোগসমূহ (রাজনৈতিক প্রচার):
তৃণমূলের টাস্ক ফোর্স: তৃণমূল তাদের দলীয় নেটওয়ার্ককে মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, বীরভূম, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো উচ্চ-পরিযায়ী জেলাগুলিতে একত্রিত করেছে 2।
পরিযায়ী ট্র্যাকিং সেল: প্রতিটি পৌর ওয়ার্ড, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্লককে পরিযায়ী ট্র্যাকিং সেল তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় দলীয় কর্মীরা পরিচালনা করে। এই সেলগুলি বহির্গামী পরিযায়ী শ্রমিকদের রিয়েল-টাইম রেজিস্টার বজায় রাখে 2।
প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল এবং অভিযোগ নিষ্পত্তি: অভিযোগ পাওয়ার পর, এই টাস্ক ফোর্সগুলি বিবরণ যাচাই করে এবং স্থানীয় পুলিশ ও ব্লক অফিসের সাথে সমন্বয় করে। তারা দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য প্রথম যোগাযোগের স্থান হিসাবে কাজ করে, নথি তৈরিতে সহায়তা করে, প্রশাসনকে সতর্ক করে এবং কখনও কখনও অভিযোগকারীদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে 2।
জেলা পরিযায়ী শ্রমিক সমন্বয় দল: মাঠ পর্যায়ের প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য, বিডিও, বিধায়ক, পৌর কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত কর্মকর্তা এবং জেলা পরিযায়ী বোর্ড ও শ্রম বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই দলগুলি গঠিত হয়েছে 2।
বিধায়ক-নেতৃত্বাধীন হেল্পডেস্ক: উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেনের একটি পূর্ণকালীন হেল্পডেস্ক একটি কার্যকর জেলা-স্তরের হস্তক্ষেপ হিসাবে দেখা গেছে, যা আটককৃত সদস্যদের পরিবারগুলিকে সহায়তা করে 2।
তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ব্যাপক কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং হেল্পলাইন চালু করলেও, এগুলি মূলত দুর্দশা এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ বলে মনে হয়, যা পরিযায়ীতার মূল অর্থনৈতিক কারণগুলিকে (চাকরির অভাব, শিল্প পতন) সরাসরি মোকাবেলা করার জন্য সক্রিয় সমাধান নয় 8। এটি রোগের মূল কারণের পরিবর্তে উপসর্গের ব্যবস্থাপনার উপর মনোযোগ নির্দেশ করে। সংস্থাগুলির ক্রমাগত বহির্গমন 14 এবং "চাকরির তীব্র অভাব" 8 এর ধারাবাহিকতা তুলে ধরে যে মানুষকে বাইরে ঠেলে দেওয়ার মৌলিক অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিগুলি অমীমাংসিত রয়েছে বা আরও খারাপ হয়েছে। কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি, দুর্দশাগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য উপকারী হলেও, রাজ্যের মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরি করে না।
৩.৩ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চালিকাশক্তি (ধারাবাহিকতা)
রাজ্যে তরুণদের জন্য চাকরির তীব্র অভাব এবং স্থানীয় শিল্পে কম মজুরি পরিযায়ীতার অন্যতম প্রধান কারণ 8। মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং দক্ষিণ ভারতের মতো অন্যান্য রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি মজুরি এবং উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, যা শ্রমিকদের আকর্ষণ করে 8। শিল্পে ধারাবাহিক পতন একটি বড় উদ্বেগ। ২০১৪-২৫ সালের মধ্যে ৬,৬০০ টিরও বেশি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্যান্য রাজ্যে চলে গেছে 14। এর কারণ হিসেবে "শিল্প-বিরোধী মনোভাব" এবং "দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি" উল্লেখ করা হয়েছে 14।
একই সময়ে, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের মতো অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রায় ১.৫ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেন 8। অন্যান্য রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক অভ্যন্তরীণ পরিযায়ী উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বাঙালি শ্রমিকদের বাইরে চলে যাওয়া ইঙ্গিত করে যে রাজ্যে উপলব্ধ চাকরিগুলির দক্ষতা, মজুরি বা প্রকারের মধ্যে একটি অমিল রয়েছে। এটি কেবল একটি সামগ্রিক চাকরির অভাবের পরিবর্তে একটি জটিল শ্রমবাজারের গতিশীলতা বোঝায়। যদি পশ্চিমবঙ্গে ১.৫ কোটি মানুষের জন্য চাকরি থাকে, তবে কেন তার নিজের নাগরিকরা এত বড় সংখ্যায় বাইরে চলে যাচ্ছে? এটি ইঙ্গিত করে যে পশ্চিমবঙ্গে উপলব্ধ চাকরিগুলি স্থানীয় বাঙালি কর্মীবাহিনীর দক্ষতা, মজুরি প্রত্যাশা বা পছন্দের কাজের প্রকারের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে, অথবা এর বিপরীত। এটি শ্রমবাজারে একটি বিভাজন নির্দেশ করে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু খাত বাহ্যিক শ্রম দ্বারা পূরণ হয় যখন স্থানীয় শ্রম অন্যত্র সুযোগ খোঁজে।
সারণী ২: তৃণমূল কংগ্রেস আমলে পরিযায়ী শ্রমিকের আনুমানিক সংখ্যা ও সরকারের কল্যাণমূলক উদ্যোগ (২০১১-২০২৫)
এই সারণীটি তৃণমূল আমলের পরিযায়ীতার ডেটা এবং সরকারের বহু-মুখী প্রতিক্রিয়ার একটি সমন্বিত চিত্র প্রদান করে। এটি সমস্যার মাত্রা এবং উদ্যোগের পরিসর তুলে ধরে। মূল চালিকাশক্তির সাথে সরকারের কল্যাণমূলক উদ্যোগের তুলনা নীতিগুলি মূল কারণগুলিকে মোকাবেলা করছে নাকি কেবল উপসর্গগুলিকে, তা তাৎক্ষণিক চাক্ষুষ মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।
৪. তুলনামূলক বিশ্লেষণ: প্রবণতা, নীতি ও প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকের প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেস উভয় সরকারের আমলেই কিছু ধারাবাহিকতা এবং কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
৪.১ চালিকাশক্তিগুলির ধারাবাহিকতা ও সংখ্যার বৃদ্ধি
উভয় সরকারের আমলেই পরিযায়ীতার প্রধান চালিকাশক্তিগুলি মূলত অর্থনৈতিক রয়ে গেছে: স্থানীয় কর্মসংস্থানের অভাব এবং কম মজুরি 7। শিল্পে পতন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থতা একটি ধারাবাহিক সমস্যা হিসেবে উভয় শাসনামলেই পরিলক্ষিত হয়েছে 7। বামফ্রন্ট শাসনের শেষ দিকে (২০০১-২০১১) পরিযায়ীতার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেলেও (১ লক্ষ), তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে এই সংখ্যা 'আকাশচুম্বী' হয়েছে (৮ বছরে ১১ লক্ষ, সরকারি অনুমান ২২ লক্ষ, WBMWU এর মতে ৬০ লক্ষ) 8। এটি পরিযায়ীতার মাত্রায় একটি নাটকীয় বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
৪.২ নীতিগত পরিবর্তন ও সাধারণ চ্যালেঞ্জ
বামফ্রন্ট সরকার প্রাথমিকভাবে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে মনোযোগ দিয়েছিল 5, কিন্তু মরিচঝাঁপি গণহত্যার পর তাদের নীতিতে পরিবর্তন আসে এবং তারা শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে 5। পরিযায়ী বহির্গমনকে একটি স্বতন্ত্র নীতিগত সমস্যা হিসেবে তারা প্রায়শই ছোট করে দেখেছে, অথবা শিল্প বৃদ্ধির লক্ষ্যের মাধ্যমে এটিকে পরোক্ষভাবে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছে। বামফ্রন্টের শেষ দিকের ইশতেহারগুলিতে "উদ্বাস্তুদের খুব কম উল্লেখ" এবং "অভ্যন্তরীণ শ্রমিকের বহির্গমন রোধে শিল্পায়নের" উপর জোর ইঙ্গিত দেয় যে তারা পরিযায়ীতাকে পরোক্ষভাবে মোকাবেলা করার বা এটিকে একটি স্বতন্ত্র সমস্যা হিসাবে উপেক্ষা করার কৌশল নিয়েছিল।
এর বিপরীতে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশাকে স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে 1 এবং সরাসরি কল্যাণমূলক ও সহায়তা ব্যবস্থা (হেল্পলাইন, বোর্ড, টাস্ক ফোর্স) চালু করেছে 2। এটি বামফ্রন্টের শেষ দিকের পদ্ধতির থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। তৃণমূল কংগ্রেসের ডেডিকেটেড হেল্পলাইন, বোর্ড এবং দলীয় টাস্ক ফোর্স তৈরি একটি সরাসরি, দৃশ্যমান স্বীকৃতি এবং প্রতিক্রিয়া। এটি কেবল নীতিগত সরঞ্জামগুলির পার্থক্য নয়; এটি সমস্যাটিকে কীভাবে চিহ্নিত করা হয় এবং রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হয় তার পার্থক্য।
উভয় সরকারই বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সংগ্রাম করেছে, যা ক্রমাগত পরিযায়ী বহির্গমনকে উৎসাহিত করেছে 7। ভূমি অধিগ্রহণ নীতি (বামফ্রন্টের অধীনে সিঙ্গুর/নন্দীগ্রাম) 5 এবং "শিল্প-বিরোধী মনোভাব" (তৃণমূল কংগ্রেস) 14 এই সমস্যায় অবদান রেখেছে। বামফ্রন্টের অধীনে শিল্প পতনের কারণ হিসেবে "দুর্বল কর্মসংস্কৃতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শাসনের ব্যর্থতা" উল্লেখ করা হয় 7। অন্যদিকে, তৃণমূলের অধীনে "৬৬৮৮টি কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে গেছে", যার কারণ হিসেবে "শিল্প-বিরোধী মনোভাব" এবং "দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি" উল্লেখ করা হয়েছে 14। শিল্প স্থবিরতা এবং শিল্প পতনের এই ধারাবাহিক আখ্যান, শাসক দল নির্বিশেষে, ইঙ্গিত দেয় যে সমস্যাটি রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোতে গভীরভাবে প্রোথিত। এটি কেবল একটি সরকারের নীতি সম্পর্কে নয়, বরং সম্ভবত অবকাঠামো, আমলাতান্ত্রিক বাধা বা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার অভাবের মতো পদ্ধতিগত সমস্যাগুলির কারণে শিল্পগুলিকে ধরে রাখা বা আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে ক্রমাগত পরিযায়ী বহির্গমন ঘটে।
৪.৩ রাজনৈতিক মাত্রা
"ভোটব্যাঙ্ক" রাজনীতি এবং "অবৈধ অভিবাসন" 11 এর ভূমিকা উভয় বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেসের আখ্যান জুড়ে একটি ধারাবাহিক, যদিও বিতর্কিত, অন্তর্নিহিত বিষয়। "বামফ্রন্ট থেকে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের successive সরকারগুলি বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনকে tacitly উৎসাহিত বা উপেক্ষা করার জন্য ধারাবাহিক অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। সমালোচকরা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে এই কৌশলটি তাদের 'ভোটব্যাঙ্ক'কে শক্তিশালী করতে কাজ করে" 17। এই পুনরাবৃত্ত থিমটি ইঙ্গিত করে যে পরিযায়ীতা, বিশেষত আন্তঃসীমান্ত, কেবল একটি অর্থনৈতিক বা মানবিক সমস্যা নয় বরং একটি অত্যন্ত রাজনৈতিক সমস্যা, যেখানে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ নীতিগত সিদ্ধান্ত বা তার অভাবকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি অর্থনৈতিক বা কল্যাণমূলক ভিত্তিতে সমস্যাটিকে মোকাবেলা করা কঠিন করে তোলে।
৫. উপসংহার: ভবিষ্যতের পথ
পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বহির্গমন একটি গভীর-মূল আর্থ-সামাজিক সমস্যা, যা কয়েক দশক ধরে তীব্র হয়েছে। উভয় বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস সরকারই এই সমস্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, কিন্তু মূল চালিকাশক্তিগুলি অপরিবর্তিত রয়েছে। এই সমস্যার ধারাবাহিক এবং ক্রমবর্ধমান প্রকৃতি এই বিষয়টিকে তুলে ধরে যে সমস্যাটি গভীরভাবে পদ্ধতিগত এবং এর জন্য একটি দ্বিদলীয়, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক কৌশল প্রয়োজন যা কেবল স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধান বা কল্যাণমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর কেন্দ্রিক।
কেবল দুর্দশা মোকাবেলা করার বাইরে, রাজ্যের মধ্যে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য। এই জটিল সমস্যা মোকাবেলায় নিম্নলিখিত সুপারিশগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে:
সঠিক ডেটা সংগ্রহ: পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা সম্পর্কে বিদ্যমান বিশাল বৈষম্য (যেমন ২২ লক্ষ বনাম ৬০ লক্ষ) দূর করতে একটি নির্ভুল এবং ব্যাপক ডেটা সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এটি নীতি প্রণয়নের জন্য বাস্তবসম্মত ভিত্তি প্রদান করবে।
লক্ষ্যভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন: রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শিল্প চাহিদা এবং রাজ্যের বাইরের সুযোগগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষ্যভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করা উচিত। এটি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য আরও প্রস্তুত করবে এবং তাদের মজুরি বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা: শিল্প আকর্ষণ এবং ধরে রাখার জন্য রাজ্যের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও অনুকূল করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সহজ নীতি, উন্নত অবকাঠামো এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস।
পরিযায়ী শ্রমিক সুরক্ষায় আন্তঃরাজ্য সমন্বয়: পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানি, আটক বা শোষণের ঘটনা মোকাবেলায় অন্যান্য রাজ্যের সাথে শক্তিশালী আন্তঃরাজ্য সমন্বয় এবং আইনি সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।
গ্রামীণ দুর্দশার মূল কারণগুলি মোকাবেলা: ভূমি সংস্কার, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ দুর্দশার মূল কারণগুলি মোকাবেলা করা প্রয়োজন, যাতে মানুষ জীবিকার জন্য গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য না হয়।
এই সমস্যাটি একটি দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জ, এবং এর সমাধান কোনো একক সরকারের প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। এটি একটি সামগ্রিক এবং সমন্বিত পদ্ধতির দাবি রাখে, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা একত্রিত হয়ে কাজ করবে।