" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory যমুনা দূষণ: প্রতিশ্রুতির আড়ালে এক মৃতপ্রায় নদী //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

যমুনা দূষণ: প্রতিশ্রুতির আড়ালে এক মৃতপ্রায় নদী

 



দিল্লি , ১৮ জুলাই, ২০২৫: একসময়ের প্রাণোচ্ছল যমুনা নদী আজ দূষণের ভারে ন্যুব্জ। বছরের পর বছর ধরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অসংখ্য প্রতিশ্রুতির পরও শিল্প ও গৃহস্থালির অপরিশোধিত বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন এবং অন্যান্য দূষকের কারণে নদীটি কার্যত এক মৃতপ্রায় খালে পরিণত হয়েছে, যা রাজধানী দিল্লির পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।

দূষণের ভয়াবহ চিত্র: ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি

যমুনা নদীর দূষণের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, প্রায়শই এর জলে বিষাক্ত সাদা ফেনার আস্তরণ দেখা যায়। এই ফেনা শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক বর্জ্যের ফল বলে মনে করা হয়।পরিবেশবিদদের মতে, নদীটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই মৃত থাকে এবং এর জল কালো বর্ণ ধারণ করে। দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির তথ্য অনুযায়ী, নদীর জলে ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা সহনীয় সীমার চেয়ে বহুগুণ বেশি, যা প্রমাণ করে যে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে।কেন্দ্রীয় সরকারের 'নমামি গঙ্গে' প্রকল্পের অংশ হওয়া সত্ত্বেও যমুনার এই করুণ দশা প্রশ্ন তোলে প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে।

দূষণের প্রধান কারণ: প্রশাসনিক উদাসীনতা

যমুনা দূষণের জন্য একাধিক কারণ দায়ী, যার মূলে রয়েছে প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাব:

  • অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য: দিল্লির প্রায় ৮০০ মিলিয়ন লিটার অপরিশোধিত বর্জ্য জল প্রতিদিন যমুনায় মেশে। শহরের পয়ঃশোধনাগারগুলোর (STPs) অধিকাংশই কার্যকরভাবে বর্জ্য শোধন করতে পারে না। সরকারের আধুনিকীকরণ ও নজরদারির অভাবে এই শোধনাগারগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। 

  • শিল্প বর্জ্য: বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নদীতে ফেলা হয়। পরিবেশ আইন প্রয়োগে সরকারের শিথিলতা এবং নজরদারির অভাবে শিল্পপতিরা নির্বিঘ্নে দূষণ চালিয়ে যাচ্ছে। 

  • গৃহস্থালির বর্জ্য: নদীর তীরে অবস্থিত বসতি ও বাজার থেকে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক, পলিথিন এবং অন্যান্য গৃহস্থালির বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে।  অবৈধ দখলদারিত্ব এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

  • নালার দূষণ: শহরের প্রায় ২৩টি বড় নালা দিয়ে আবর্জনা ও বর্জ্য জল সরাসরি যমুনায় গিয়ে মেশে। এর মধ্যে নাজাফগড় ড্রেন অন্যতম, যা দূষণের একটি প্রধান উৎস।  এই নালাগুলো পরিষ্কার ও বর্জ্যমুক্ত করার দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি কেবল কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ।

পরিষ্কারে উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ: অর্থ খরচ হলেও ফল শূন্য

যমুনা পরিষ্কারের জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। দিল্লি সরকার নদী পরিষ্কারের জন্য ১০২৮ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।  এছাড়া, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিচ্ছে। 

তবে এই উদ্যোগগুলোর সামনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ, যা মূলত সরকারের দুর্বল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ফল:

  • অপরিকল্পিত ড্রেজিং: নদী থেকে পলি অপসারণের জন্য ড্রেজিং করা হলেও, অনেক ক্ষেত্রে তা অপরিকল্পিত হওয়ায় নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে এবং ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর বাস্তুতন্ত্র আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

  • অবৈধ দখল: নদীর দুই তীর দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, যেখান থেকে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে নদী ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে।

  • জনসচেতনতার অভাব: নদী দূষণ রোধে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব একটি বড় অন্তরায়। তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ও কার্যকর প্রচারণার অভাবও লক্ষণীয়।

পরিণতি ও ভবিষ্যৎ: এক ঐতিহাসিক নদীর বিলুপ্তি?

যমুনা দূষণের কারণে নদীর বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। জলজ প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত এবং নদী সংলগ্ন এলাকার উর্বরতা নষ্ট হয়েছে।  দূষিত জলের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট এবং চর্মরোগের মতো নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, যমুনাকে বাঁচাতে হলে কেবল অর্থ বরাদ্দ নয়, বরং কঠোর আইন প্রয়োগ, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়ঃশোধনাগারগুলোর আধুনিকীকরণ এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ভারতের এই ঐতিহাসিক নদীটি অচিরেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies