বেইজিং, চীন – ২৫শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (১৮ই জুলাই, ২০২৫) – উচ্চ-গতির পরিবহনে চীন আবারও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তারা সফলভাবে একটি যুগান্তকারী ম্যাগলেভ (চৌম্বক উত্তোলন) ট্রেনের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা ৬৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (প্রায় ৪০৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা) অবিশ্বাস্য গতিতে পৌঁছেছে। চীনের হুবেই প্রদেশের ডংহু ল্যাবরেটরির গবেষকদের দ্বারা নিশ্চিত হওয়া এই বিশাল অর্জন, ম্যাগলেভ প্রযুক্তিতে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছে এবং দীর্ঘ-দূরত্বের ভ্রমণে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে।
১.১ টন ওজনের এই পরীক্ষামূলক যানটি ১০০০ মিটার দীর্ঘ একটি পরীক্ষামূলক ট্র্যাকে এই অসাধারণ গতি অর্জন করেছে। মাত্র ৭ সেকেন্ডে ৬০০ মিটার দূরত্বে এটি ৬৫০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে পৌঁছে যায়। ল্যাবের হাই-স্পিড ম্যাগলেভ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রপালশন টেকনোলজি ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক লি ওয়েইচাও এই প্রযুক্তির নির্ভুলতা তুলে ধরেছেন, উল্লেখ করেছেন যে সিস্টেমটি উচ্চ গতি থেকে মাত্র ২০০ মিটারের মধ্যে যানটিকে সম্পূর্ণ থামিয়ে দিতে সক্ষম।
এই নতুন ম্যাগলেভ সিস্টেম চৌম্বক উত্তোলনের নীতিতে কাজ করে, যেখানে শক্তিশালী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি ট্রেনটিকে ট্র্যাকের উপরে তুলে ধরে, ঘর্ষণ দূর করে এবং অভূতপূর্ব গতি অর্জন করতে সাহায্য করে। প্রকৌশলীরা ৮০০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে এটিকে কার্যকর করার লক্ষ্য নিয়েছেন বলে জানা গেছে, এবং উচ্চ-গতির ট্র্যাকের সম্পূর্ণ নির্মাণ ২০২৫ সালের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই যুগান্তকারী সাফল্যের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। যদিও বাণিজ্যিক প্রয়োগে এখনও কিছুটা সময় লাগবে, তবে ভ্রমণের সময় নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বিশাল। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত প্রায় ২২০০ কিলোমিটারের একটি ভ্রমণ, যদি সরাসরি রুটে অবিচ্ছিন্ন উচ্চ গতিতে স্থাপন করা হয়, তবে তাত্ত্বিকভাবে ৩ ঘন্টার কিছু বেশি সময়েই অতিক্রম করা যেতে পারে। এটি অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, যা একটি আরও দক্ষ এবং সম্ভাব্য পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প সরবরাহ করবে।
চীন বহু বছর ধরে উচ্চ-গতির রেল প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে, এবং তাদের বিদ্যমান উচ্চ-গতির রেল নেটওয়ার্ক বিশ্বের বৃহত্তম। সাংহাই ম্যাগলেভ বর্তমানে ৪৩১ কিমি/ঘণ্টা গতিতে দ্রুততম বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত ট্রেনের রেকর্ড ধরে রেখেছে। এই নতুন উন্নয়ন রেল প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে এবং ভবিষ্যতের পরিবহনের জন্য নতুন বৈশ্বিক মান নির্ধারণে চীনের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ৫০০-১০০০ কিমি/ঘণ্টা পরিসরে পরিচালিত ম্যাগলেভ সিস্টেমগুলি স্বল্প থেকে মাঝারি দূরত্বের ফ্লাইটের সাথে কার্যকরভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারে, বিশেষ করে নিরাপত্তা এবং বোর্ডিং প্রক্রিয়া সহ বিমানবন্দরগুলিতে বাঁচানো সময় বিবেচনা করে। যদিও ম্যাগলেভ অবকাঠামো নির্মাণ একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ, তবে গতি, দক্ষতা এবং সম্ভাব্য কম নির্গমনের দিক থেকে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাগুলি এটিকে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান করে তুলতে পারে।বিশ্বের প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে, কারণ চীন উচ্চ-গতির পরিবহনের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন চালিয়ে যাচ্ছে, যা অতি-দ্রুত, ঘর্ষণবিহীন ভ্রমণের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করছে।