দুর্গাপুর, ৩০শে জুলাই, ২০২৫: আজ দুর্গাপুরের টিএ বিল্ডিং চলো অভিযান কেবল একটি বিক্ষোভ ছিল না, ছিল এক অব্যক্ত যন্ত্রণার সমষ্টি, এক বুক ভরা আশা আর অবিচল সংকল্পের প্রতিচ্ছবি। প্রকৃতির রুদ্র রূপ, আকাশের ঝরঝর ধারাকে উপেক্ষা করে ইস্পাত নগরীর হাজারো মানুষ আজ পথে নেমেছিলেন। তাদের কণ্ঠে ছিল এক সুদীর্ঘ বঞ্চনার প্রতিবাদ, চোখে ছিল সুষ্ঠু পরিষেবা পাওয়ার আকুল আবেদন। এই অভূতপূর্ব জনসমাগম প্রমাণ করে দিল, নাগরিকরা তাদের অধিকার আদায়ে কতটা মরিয়া।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই ইস্পাত অঞ্চলের জল ও বিদ্যুৎ পরিসেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। জীবনের অন্যতম মৌলিক চাহিদা, পানীয় জল আর বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহ দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগের প্রতিবাদেই আজ দুর্গাপুর ইস্পাত নাগরিক সমিতি এই ঐতিহাসিক অভিযানের ডাক দিয়েছিল।
টিএ বিল্ডিংয়ের সামনে যখন জনস্রোত আছড়ে পড়ছিল, তখন আকাশের মেঘও যেন তাদের যন্ত্রণার সাক্ষী হয়ে কাঁদছিল। প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েও কেউ একচুলও নড়েনি। বরং, ভিড়ের তেজ যেন ততই বাড়ছিল। এই দৃশ্য আবেগ আর সংকল্পের এক নতুন বার্তা বহন করে আনল।
এই মহতী সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা। তাদের প্রতিটি শব্দে ছিল ইস্পাত নগরীর অগণিত মানুষের না বলা কথা। স্বপন সরকার, ললিত মিশ্র, সুদীপ্ত নাথ, সুখময় বোস, আশীষ তরু চক্রবর্তী এবং সুভাষ ঘোষ— এই প্রতিটি নাম আজ দুর্গাপুরের নাগরিক আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রইল। তাদের ওজস্বী বক্তব্য নাগরিক মননে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবিগুলির মধ্যে ছিল:
- লিজ, লাইসেন্স ও কোয়ার্টার: বহু পুরনো লিজ ও লাইসেন্স নবীকরণ, অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধি বন্ধ করা, এবং কোয়ার্টার সংক্রান্ত জটিল বিষয়গুলির দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান।
- জল ও বিদ্যুৎ: নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন পরিসেবা প্রদান। দীর্ঘদিন ধরে চলা জল ও বিদ্যুতের সংকটে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই মূল সমস্যাটিই আজকের বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।
- অন্যান্য পরিষেবা: রাস্তার আলো, রাস্তা মেরামত এবং সমস্ত নাগরিক পরিষেবার মানোন্নয়ন।
- কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা: ইস্পাত কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায়, বিক্ষোভকারীরা কর্তৃপক্ষের সরাসরি আলোচনা ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমস্যা সমাধানের দাবি তোলেন।
আজকের এই অভিযান শুধু দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের জন্য নয়, এটি সমগ্র সমাজের জন্য একটি বার্তা। যখন নাগরিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, তখন প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও তারা রুখে দাঁড়াতে পারেন। ইস্পাত কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া না এলেও, আজকের এই জনস্রোত নিশ্চয়ই তাদের বিবেককে নাড়া দেবে বলে বিশ্বাস করেন দুর্গাপুরের মানুষ। এখন দেখার বিষয়, এই আবেগঘন প্রতিবাদ কতটা আলো ছড়াতে পারে ইস্পাত নগরীর প্রতিটি ঘরে।