দুর্গাপুর, ১৮ জুলাই:
আজ দুর্গাপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের জন্য একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। গ্যাস পাইপলাইন, রেল সংযোগ ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “দুর্গাপুরকে ভারতের ‘স্টিল সিটি’ ও শ্রমশক্তির কেন্দ্র হিসেবে আরও শক্তিশালী করতে ₹৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে পশ্চিমবঙ্গ হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিন।”
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় উঠে আসে গৃহস্থালি ও শিল্পের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস সরবরাহ, পূর্ব ভারতের ৬টি রাজ্যে জাতীয় গ্যাস গ্রিড, রেল স্টেশন আধুনিকীকরণ, ওভারব্রিজ ও নতুন রেললাইন নির্মাণ, দুর্গাপুর বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের মতো পরিকল্পনা। তিনি বন্দে ভারত ট্রেন ও মেট্রো প্রকল্পেরও প্রশংসা করেন। তাঁর মতে, এই প্রকল্পগুলি শিল্প ও কর্মসংস্থানকে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাবে।
কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি: প্রধানমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হবে—পরিকাঠামো নির্মাণ থেকে গ্যাস সংযোগের বিস্তারে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে।
বামপন্থীদের অভিযোগ: প্রতিশ্রুতি অনেক, বাস্তবায়ন শূন্য
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই বামপন্থী দলগুলো এই সভাকে “শুধু বক্তৃতা, শ্রমজীবীদের জন্য কোনো বাস্তব উন্নয়ন নয়” বলে কটাক্ষ করে। সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব বলেন, “বক্তৃতা দিয়ে শ্রমিকদের মুখে হাসি আনা যায় না। বিজেপি নিজেই দুর্গাপুরের মেশিন টুলস কারখানা (MAMC) বন্ধ করে দিয়েছে, Bogl কারখানা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। ডিএসপি আর এএসপির আধুনিকীকরণ আজও হয়নি, অথচ বেসরকারিকরণ (ডিসইনভেস্টমেন্ট) পরিকল্পনা বহাল আছে।”
বাম নেতৃত্বের মতে, যে কারখানাগুলোতে আধুনিকীকরণ হয়নি, সেগুলো কীভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে? স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেইল) অধীনে থাকা এই কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও মজুরি চুক্তি ঝুলে রয়েছে। গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পেও গেইলকে উপেক্ষা করে আদানির মতো বেসরকারি সংস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
“মোদি সরকার বরাবর বেসরকারিকরণের পক্ষে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে বঞ্চিত করে কর্পোরেটদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে। আদানি গ্যাস প্রকল্পে জায়গা পেলেও সরকারি গেইল বঞ্চিত। ডিএসপি-এএসপির আধুনিকীকরণ আটকে রেখে বেসরকারিকরণের চেষ্টা আসলে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী।”
বিজেপি-তৃণমূল সমঝোতার অভিযোগ
দুর্নীতির তদন্ত নিয়েও বামপন্থীরা কেন্দ্র ও রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। “নারদা কাণ্ডে কেউ শাস্তি পায়নি, আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় তদন্ত ঝুলে আছে, অনুব্রত মণ্ডল জামিনে বেরিয়ে আসছেন—সবই বিজেপি ও তৃণমূলের আঁতাতের ফল।”
সিপিএম নেতারা বলেন, এই ধরনের সমঝোতা আসলে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের অপশাসনকে মজবুত করছে, আর মোদির ভাষণগুলোও সেই নাটকেরই অংশ।
একই শহরে দুই বার্তা
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে যে উন্নয়নের ছবি আঁকা হল, বাস্তবে শ্রমজীবী মানুষের চোখে তা ধোঁয়াশা। বামপন্থীদের মতে, কর্পোরেটপন্থা নয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণে শিল্প ও শ্রমিক স্বার্থ সুরক্ষা করলেই দুর্গাপুরের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।
#Durgapur #NarendraModi #WestBengalDevelopment #LeftCriticism #DSP #ASP #SAILWorkers #Privatisation #CPIM #BJPvsTMC #WorkingClassRights #Adani #GAIL #NaradaScam #BengalPolitics