" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে বিজ্ঞান ও দর্শনের মেলবন্ধন: দুর্গাপুরে 'রবিগানে ব্রহ্মাণ্ডচেতনা' Merging Science and Philosophy on Rabindra Pranam Divas: 'Rabigaane Brahmandachetana' in Durgapur //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে বিজ্ঞান ও দর্শনের মেলবন্ধন: দুর্গাপুরে 'রবিগানে ব্রহ্মাণ্ডচেতনা' Merging Science and Philosophy on Rabindra Pranam Divas: 'Rabigaane Brahmandachetana' in Durgapur

 


📍 দুর্গাপুর,  — আজ ২২শে শ্রাবণ (৮ই আগস্ট), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণ দিবস। এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করতে দুর্গাপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এক অভিনব উদ্যোগের সাক্ষী হলো। শহরের অন্যতম জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘লহরী’ আয়োজন করেছিল এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান— ‘রবিগানে ব্রহ্মাণ্ডচেতনা’। এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীতের গভীর ভাবনার সঙ্গে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জটিল তত্ত্বের এক অসাধারণ মেলবন্ধন ঘটানো হয়, যা দুর্গাপুরের বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।



দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর পরিচিত ‘সম্পর্ক ভবন’-এ এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ভবনটি আজ সন্ধ্যায় কেবল একটি মিলনায়তন ছিল না, বরং তা হয়ে উঠেছিল রবীন্দ্রিক চিন্তা ও আধুনিক বিজ্ঞানের সংযোগস্থল। লহরীর সদস্যরা এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণ করলেন যে, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আজও বিজ্ঞান ও দর্শনের নবতম আবিষ্কারের সঙ্গে গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক।











 শ্রীরূপা চোঙদার: বিজ্ঞান ও দর্শনের মেলবন্ধনকারী এক অনন্য বক্তা

ড. শ্রীরূপা চোঙদার হলেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী ও দার্শনিক, যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনকে আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি এনআইটি রাউরকেলা থেকে কণা পদার্থবিদ্যা (Particle Physics) এবং সৃষ্টিতত্ত্ব (Cosmology)-এর ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল নিউট্রিনো পদার্থবিদ্যা এবং সৃষ্টিতত্ত্ব


মূল বক্তব্য এবং প্রধান দিকসমূহ

শ্রীরূপা চোঙদারের বক্তৃতাগুলি মূলত বিজ্ঞান ও দর্শনের গভীর সম্পর্ক নিয়ে গঠিত। তিনি তাঁর বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথের গানের কথা এবং কবিতার পঙ্‌ক্তি ব্যবহার করে জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলিকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করেন। তার আলোচনার প্রধান বিষয়গুলো হলো:

  • বিগ ব্যাং এবং সৃষ্টির রহস্য: তিনি বিগ ব্যাং তত্ত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির বিস্ময়কে যুক্ত করেন। তার মতে, মহাবিশ্বের উৎপত্তি 'শূন্য' থেকে হওয়ায় এই রহস্য আজও অমীমাংসিত। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় এই গভীর বিস্ময়ই প্রতিফলিত হয়েছে।

  • মহাজাগতিক নৃত্য: তিনি মহাবিশ্বের নিরন্তর সৃষ্টি ও ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে 'কসমিক ডান্স' বা মহাজাগতিক নৃত্যের ধারণাটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডের CERN-এ স্থাপিত নটরাজের মূর্তি এই ধারণারই একটি শক্তিশালী প্রতীক।

  • চেতনা ও কোয়ান্টাম দর্শন: তিনি বলেন, চেতনা ছাড়া কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই সম্পূর্ণ নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী স্যার রজার পেনরোজ এবং নিলস বোর-এর কথা উল্লেখ করেন। তিনি মনে করেন, মহাবিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল দর্শক-অভিনেতার নয়, বরং তা এক 'মহাজাগতিক প্রেমের সম্পর্ক'।


শ্রীরূপা চোঙদারের অবদান

শ্রীরূপা চোঙদারের বক্তৃতাগুলি বিজ্ঞান এবং মানবতা, এই দুটি ভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে একটি নতুন ধরনের বোঝাপড়া তৈরি করে। তিনি দেখিয়েছেন যে রবীন্দ্রনাথ কেবল একজন কবি বা সাহিত্যিক নন, বরং একজন গভীর চিন্তাবিদ যার ধারণাগুলি আজও আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।







প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মের মেলবন্ধন

লহরীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সীমান্ত তরফদার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তিনি তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে রবীন্দ্রনাথের সর্বজনীন প্রাসঙ্গিকতার কথা তুলে ধরেন। এরপর বিশিষ্ট কবি সমীর দাস-এর আবৃত্তি দর্শকদের মুগ্ধ করে। তিনি তারুণ্যের দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরেন এবং নবীন প্রজন্মের কাছে কবির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।






অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে শিল্পী সৌম্য দত্ত-এর সুমধুর কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত। তাঁর গানে ফুটে ওঠে ২২শে শ্রাবণের করুণ সুর এবং একইসঙ্গে কবির অনন্ত জীবনের বার্তা। লহরীর তরুণ ও অনুজ সদস্যরাও সমবেতভাবে গান ও আবৃত্তিতে অংশ নেন। এছাড়াও কবিতার মধ্য দিয়ে চিত্রপট তুলে ধরেন নিবেদিতা বিশ্বাস এবং কবি সমীর চক্রবর্তী। সংগীতে সঙ্গত করেন ডালিয়া এবং রাখি সরকার।এছাড়াও ধন্যবাদান্তে জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক  লেখক শিল্পী সংঘ  তরফ থেকে  কানাই বিশ্বাস এবং শিল্পায়নের তরফ থেকের নাট্যকার শুভেন্দু বাবু এই আয়োজনের বিশেষ দিক ছিল নবীন প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী— সকলেই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল, যা প্রমাণ করে যে, এই ধরনের উদ্যোগ আগামী প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রচেতনাকে নতুন আঙ্গিকে পৌঁছে দিতে সক্ষম।


ভবিষ্যতের পথে এক নতুন পদক্ষেপ

দুর্গাপুরের বুকে লহরীর এই আয়োজনকে অনেকে ‘কালচারাল মাইলস্টোন’ হিসেবে দেখছেন। এটি শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং বিজ্ঞান এবং দর্শনের মধ্যে এক গভীর সংলাপের সূচনা। এই ধরনের উদ্যোগ আগামী দিনে আরও গবেষণামূলক ও সৃজনশীল কাজের জন্ম দেবে বলে আশা করা যায়। ‘রবিগানে ব্রহ্মাণ্ডচেতনা’ প্রমাণ করল যে, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সংগীত কেবল আবেগ বা সৌন্দর্যের প্রকাশ নয়, বরং তা আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনেও সক্ষম।



দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘রবিগানে ব্রহ্মাণ্ডচেতনা’ অনুষ্ঠানটি জ্ঞানের আন্তঃসংযুক্ততার জন্য গভীর উপলব্ধি তৈরিতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই আয়োজনটি কেবল রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, বরং বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ সংলাপের সূচনাও করেছে। এটি প্রমাণ করে যে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সঙ্গীত কেবল আবেগ বা সৌন্দর্যের প্রকাশ নয়, বরং তা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনেও সক্ষম।

এই উদ্যোগটি একটি নতুন বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার সম্ভাবনা রাখে, রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার, অতীতের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, আধুনিক যুগে মহাবিশ্বকে বোঝার জন্য একটি প্রাণবন্ত কাঠামো সরবরাহ করে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies