কলকাতা, ৯ই আগস্ট, ২০২৫: গত বছর আজকের দিনেই ঘটে যাওয়া অভয়ার প্রাতিষ্ঠানিক খুন ও ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনার এক বছর পূর্তিতে গর্জে উঠল গড়িয়া। রাখি পূর্ণিমার এই পবিত্র দিনে "প্রতিবাদী ভালোবাসার বন্ধন" এই অভিনব নামে এক প্রতিবাদী পথসভার আয়োজন করা হয় গড়িয়া চার মাথার মোড়ে। অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবিতে আয়োজিত এই সভায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেন।
সভার সূচনা করেন শ্রীমতী শুভ্রা রূপা দত্ত। তিনি তাঁর বক্তব্যে এই দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, "আজ ভালোবাসার দিন, ভাই-বোনের স্নেহের বন্ধনের দিন। কিন্তু এই দিনেই আমরা এক বোনকে হারানোর বেদনা নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। এই প্রাতিষ্ঠানিক খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে।" তাঁর আবেগঘন ভাষণ উপস্থিত জনতাকে উদ্বেলিত করে এবং অনেকেই এগিয়ে এসে প্রতিবাদী স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করেন।
পথচলতি সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে মমতাজ বেগম নামের এক মহিলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদী সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলের নজর কাড়েন। গণফ্রন্টের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সোমনাথ গুহ। টালিগঞ্জ ঐক্যতানের সত্যজিৎ চক্রবর্তী এবং চতুর্ভূজার মহিলাবৃন্দের পরিচালনায় "প্রতিবাদী ভালোবাসার বন্ধন" कार्यक्रमটি পরিচালিত হয়।
ডক্টরেট তপন কুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এবং অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। অধ্যাপক ডঃ তরুণ সমাদ্দার তাঁর বক্তব্যে বলেন, "১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রোধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখিকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। আজ আমরা এই রাখি বন্ধনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছি।" তিনি এই দিনটিকে "প্রতিবাদী রাখি বন্ধন দিবস" হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান এবং উপস্থিত জনতাকে প্রতীকী প্রতিবাদের চিহ্ন হিসেবে রাখি পরার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসংখ্য মানুষ রাখি পরেন।
'We want justice', 'We demand justice' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক। দুজন স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট প্রতিবাদী যোদ্ধা বেহালায় প্রতিবাদী সঙ্গীতের সুর তুলে পথচারীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। চতুর্ভূজার শিল্পীরাও তাঁদের গানের মাধ্যমে প্রতিবাদে সামিল হন। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং সমাজের বিশিষ্টজনেদের সম্মিলিত প্রতিবাদে রাজপথ এক ভিন্ন মাত্রা পায়।
সভার শেষে অভয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। উপস্থিত সকলে মিলে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সভার পরিসমাপ্তি ঘটান। এই প্রতিবাদী সভা বুঝিয়ে দিল, অভয়াকে ভোলেনি শহরবাসী এবং তাঁর ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।