রাজনৈতিক আস্থা ও কৌশলগত ভিত্তি:
বৈঠকে শি জিনপিং প্রস্তাব করেন যে, তিন দেশকে রাজনৈতিক আস্থা আরও সংহত করতে হবে এবং একে অপরের মূল স্বার্থের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। তিনি বর্তমান অস্থির আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের জন্য এই তিন দেশকে 'কৌশলগত ভিত্তি' হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। সহযোগিতার ক্ষেত্রে তিনি সীমান্তজুড়ে অবকাঠামো এবং জ্বালানি প্রকল্প, স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বৃদ্ধি এবং পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সহযোগিতা শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেন।
চীন-মঙ্গোলিয়া-রাশিয়া অর্থনৈতিক করিডর:
এই বৈঠকে চীন-মঙ্গোলিয়া-রাশিয়া অর্থনৈতিক করিডরকে যৌথ প্রকল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরা হয়। শি জিনপিং উল্লেখ করেন যে, ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সম্পর্ককে নতুন গতি দিচ্ছে। মঙ্গোলিয়া এই করিডরের মধ্যে পরিবহন, লজিস্টিক, জ্বালানি এবং বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্প:
বৈঠকে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়:
সয়ুজ ভোস্তক গ্যাস পাইপলাইন: মঙ্গোলিয়া হয়ে সয়ুজ ভোস্তক গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের জন্য একটি আইনত বাধ্যতামূলক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি রাশিয়ার পাওয়ার অফ সাইবেরিয়া ২-এর একটি অংশ, যা প্রতি বছর ৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পর্যন্ত গ্যাস চীনে সরবরাহ করবে।
রেল করিডর সম্প্রসারণ: চীন, মঙ্গোলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্যে ট্রান্স-মঙ্গোলিয়ান/সেন্ট্রাল রেলওয়ে করিডরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নেতাদের প্রতিক্রিয়া:
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য রাজনৈতিক আস্থা বাড়ানোকে 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' বলে অভিহিত করেন। মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট উখনাগিন খুরেলসুখ গভীর দ্বিপাক্ষিক এবং ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এই ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা এশিয়াতে একটি নতুন অর্থনৈতিক ও কৌশলগত জোটের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই বৈঠকের মাধ্যমে তিন দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী অংশীদারিত্বের দিকে পরিচালিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।