১৮৫০-এর দশকে ইংল্যান্ডে নারীজীবন শুধু ভিক্টোরিয়ান সৌজন্য আর আভিজাত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর আড়ালে লুকিয়ে ছিল ভয়, অনিশ্চয়তা এবং রাস্তাঘাটে নিরাপত্তাহীনতার এক দীর্ঘ ছায়া। সে সময় ব্রিটিশ সমাজের পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোতে নারীরা প্রায়ই অবমাননা, উত্যক্ততা ও আক্রমণের শিকার হতেন। বিশেষ করে লন্ডনের ব্যস্ত রাস্তাঘাট, অন্ধকার গলি কিংবা বাজার এলাকার ভিড়ে হেনস্তার ঘটনা ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। এই পরিস্থিতিতেই জন্ম নিয়েছিল এক অভিনব আত্মরক্ষার কৌশল—**নখরযুক্ত দস্তানা**।
নখরযুক্ত দস্তানার নকশা
এই দস্তানার বাহ্যিক রূপ ছিল একেবারেই সাধারণ। দামি চামড়ার গ্লাভসের মতোই দেখতে, যা ভিক্টোরিয়ান নারীর হাতের সৌন্দর্যের সাথে খাপ খেত। কিন্তু এর আঙুলের ডগায় লুকিয়ে থাকত ধাতব তৈরি ধারালো নখর, যা বিপদের সময়ে নারীরা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। এতে আক্রমণকারীকে চিরে ফেলা সম্ভব হতো, আবার একই সাথে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর অস্ত্র হিসেবেও কাজে দিত।
আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তা
১৮৫০-এর দশকে ‘street harassment’ বা রাস্তায় উত্যক্তকরণ ছিল নারীদের জন্য এক নির্মম বাস্তবতা, যদিও তখন এ ধারণা শুদ্ধ আনুষ্ঠানিক শব্দে স্বীকৃত ছিল না। মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী শ্রেণির পাশাপাশি আভিজাত্য পরিবার থেকে বের হওয়া নারীরাও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হতেন। পুলিশের শক্তিশালী টহলব্যবস্থা তখনও গড়ে ওঠেনি, আর নারীদের আত্মরক্ষার জন্য পাশ কাটিয়ে থাকার সংস্কৃতি ছিল বেশ প্রচলিত। ফলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই নখরযুক্ত দস্তানাকে অনেক নারী গোপনে বেছে নিতেন।
ভিক্টোরিয়ান যুগের দ্বিচারিতা
ভিক্টোরিয়ান সমাজের একদিকে যেমন ছিল নারীদের শালীন পোশাক, ভদ্রাচার এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে সেই একই সমাজ নারীদের দমবন্ধ করে রেখেছিল নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে। বাইরে বের হলে নারীদের বিপদের ভয় ভর করে থাকত। দস্তানা ছিল তখনকার নারীর সাজসজ্জার অন্যতম অংশ, অথচ এই সাজসজ্জার ভেতরেই আত্মরক্ষার গোপন অস্ত্র হয়ে উঠেছিল লুকানো নখর। এ যেন এক বিরোধাভাস—যেখানে সৌন্দর্যের আড়ালে টিকে থাকার সংগ্রাম জড়িয়ে আছে।
এক টুকরো ইতিহাস, এক প্রতীকী সংগ্রাম
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই নখরযুক্ত দস্তানাকে শুধু এক ঐতিহাসিক বস্তু হিসেবে দেখা যায়। তবে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে নারীর আত্মসম্মান রক্ষার লড়াই এবং সমাজে নিরাপত্তার জন্য নিরন্তর সংগ্রামের প্রতীক। ভিক্টোরিয়ান যুগের নারীরা নীরবে বুঝে গিয়েছিলেন—শুধু পোশাক বা আচার দিয়ে নিজেকে বাঁচানো যায় না, নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় অস্ত্র ও সাহসের সমন্বয়। এই নখরযুক্ত দস্তানা তাই অতীতের এক ভয়াবহ সত্য স্মরণ করিয়ে দেয়—নারীদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তখনও যেমন ছিল, আজও তা এক অনন্ত ধারাবাহিকতা।
#itihaser_golpo #itihasergolpo #victorianera