মুর্শিদাবাদ: আজ যখন গোটা বাংলা দুর্গাপূজার অষ্টমীর উৎসবে মাতোয়ারা, ঠিক তখনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটল মুর্শিদাবাদে। ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (DYFI)-এর মুর্শিদাবাদ জেলার তিন নেতৃত্বকে গ্রেফতার করল রেল পুলিশ। হাজতবাসের পর অবশেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয় এবং আদালত থেকে তারা জামিন পান। কিন্তু কেন এই তৎপরতা? কেনই বা এই গ্রেফতার?
সকলেই কমবেশি জানেন যে গত জানুয়ারি মাস থেকে লালগোলা-শিয়ালদহ লাইনের প্যাসেঞ্জার ট্রেনে বাথরুমের সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে। লালগোলা থেকে শিয়ালদহ প্রায় ৬ ঘণ্টার যাত্রা। এই দীর্ঘ পথে যাত্রীদের ব্লাডার ফেটে যাক বা রেক্টাম রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ুক, কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এই মুর্শিদাবাদে বাথরুম সহ রেল বগি পাঠাতে নারাজ।
গত ৯/১০ মাস ধরে স্থানীয় ব্লগে বহরমপুরের বিধায়ক, মুর্শিদাবাদ বিধানসভার বিধায়ক, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ – প্রত্যেকেই রেলের তথাকথিত 'উন্নয়নের ক্রেডিট' নিতে হাঁকডাক করেছেন, কিন্তু একবারও তাদের মুখে সেইসব অসহায় মানুষের কথা আসেনি, যাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই প্যাসেঞ্জার ট্রেন।
এখন বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, বেলডাঙায় অনেকেই আছেন যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা ছাড়া চড়েন না, প্রয়োজনে প্রিমিয়াম তৎকালে টিকিট কাটেন। এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত বগির সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। তাই বিধায়ক, সাংসদ এবং রেলের কর্তাব্যক্তিরা এই বিত্তবান ও প্রিভিলেজড যাত্রীদের নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু ব্যস্ততার কণামাত্র নেই সেই অসহায় মানুষের জন্য, যারা অর্থ ও যোগাযোগের অভাবে চিকিৎসা বা জীবিকার জন্য লালগোলা থেকে শিয়ালদহ প্যাসেঞ্জার ট্রেনের পা ফেলার জায়গা না থাকা কামরায় ৬ ঘণ্টা ধরে বাথরুমের সংস্থান ছাড়াই কাটাতে বাধ্য হন।
ঠিক এখানেই ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের লড়াই। এই লড়াই গরীব, সাধারণ, অসহায় মানুষের সুস্থ রেল যাত্রার অধিকার আদায়ের লড়াই। আর এই লড়াইটা করছে বলেই DYFI-এর নেতৃত্ব রেল পুলিশের আক্রমণের মুখে। চকচকে এসি কামরার যাত্রীদের জন্য কথা বলতে গেলে হয়তো এই আক্রমণ আসতো না। আসলে, এই লড়াই একদম পিছনের সারিতে থাকা একজন সাধারণ মানুষের জন্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, তাই আক্রমণ। এটা শ্রেণি সংগ্রাম, তাই আক্রমণ।
শহর তথা জেলার সচেতন মানুষ কি চুপ করে থাকবেন? নাকি শ্রেণি স্বার্থে এই সংগ্রামের পেছনে দাঁড়াবেন? ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।