তারিখ: ২ অক্টোবর, ২০২৫ স্থান: ওজদা, মরক্কো
এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় মরক্কোর যুব-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে যেন রক্তগঙ্গা বইতে শুরু করেছে। পূর্বাঞ্চলীয় শহর ওজদা থেকে আসা মর্মান্তিক খবরটি শুধু মরক্কোতেই নয়, বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সংঘর্ষের সময় পুলিশের একটি টহল গাড়ির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান এক তরুণ বিক্ষোভকারী। এই অমানবিক ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, যা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার দাবিকে আরও জোরালো করেছে।
#GENZ212 হ্যাশট্যাগের অধীনে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন মরক্কোর রাজপথের কান্না। গত চার দিন ধরে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমেছেন শুধু উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান চেয়ে। তাদের কণ্ঠে একটাই প্রশ্ন—সরকারের কাছে কি দরিদ্র মানুষের জীবনের চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট, যেমন আসন্ন ২০২৫ আফ্রিকা কাপ অফ নেশনস বা ২০৩০ বিশ্বকাপ, বেশি গুরুত্বপূর্ণ? যখন দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার অভাবে মায়ের কোল খালি হচ্ছে, তখন কেন স্টেডিয়াম নির্মাণের পেছনে ঢালা হচ্ছে শত শত কোটি টাকা?
ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়ি যেন উন্মত্তের মতো স্লোগানরত ভিড়ের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই নিষ্ঠুর হামলায় অন্তত একজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মরক্কোর মানবাধিকার অ্যাসোসিয়েশন (AMDH) জানিয়েছে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০০ জন তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্করাও রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারও কি আজ মরক্কোর তরুণদের জন্য অপরাধ?
সরকার পক্ষ পুলিশের পদক্ষেপকে 'আইনসম্মত' বলে সাফাই গাইলেও, এই সহিংসতা মেনে নিতে পারছে না কেউ। আন্দোলনকারী এবং বিরোধী দলগুলি পুলিশের এই বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অনেকেই বলছেন, তরুণদের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য আলোচনার টেবিলে বসা উচিত, অস্ত্রের মুখে তাদের কণ্ঠরোধ করা উচিত নয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবিসি, রয়টার্স এবং আল জাজিরা জানিয়েছে, সংঘর্ষে কমপক্ষে দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। এই তরুণরা স্বপ্ন দেখতেন একটি সুন্দর মরক্কোর, কিন্তু এখন তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে পুলিশের বুটের নিচে। তারা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন, আর তার বিনিময়ে পাচ্ছেন গ্রেফতার আর বুলেট।
এই পরিস্থিতিতে মরক্কো এক কঠিন পরীক্ষার মুখে। একদিকে বিশ্বের সামনে নিজেদের আধুনিক ও উন্নত প্রমাণ করার চেষ্টা, অন্যদিকে নিজের ঘরের তরুণদের ওপর নেমে আসা নির্মম দমন-পীড়ন। প্রশ্ন উঠেছে, বিশাল ক্রীড়া অবকাঠামো তৈরি করে কী লাভ, যদি দেশের যুব সমাজ মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হয়? গোটা বিশ্ব আজ মরক্কোর দিকে তাকিয়ে আছে—তারা কি তাদের তরুণদের হাহাকার শুনবে, নাকি শুধু আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের জৌলুস দেখানোর চেষ্টা করবে? এই প্রতিবাদের ফলই নির্ধারণ করবে মরক্কোর আগামী দিনের ভাগ্য।