পুনে,– সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫,
জাল শংসাপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া প্রাক্তন আইএএস প্রবেশনার পূজা খেদকর আবারও নতুন এক বিতর্কে জড়িয়েছেন। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর, পুনের বিলাসবহুল বাড়ি থেকে ২২ বছর বয়সী ট্রাক হেল্পার প্রহ্লাদ কুমারকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে খেদকর পরিবারের বিরুদ্ধে।
ঘটনার সূত্রপাত ১৩ই সেপ্টেম্বর, নাভি মুম্বাইয়ের ঐরোলি সিগন্যালে। একটি ২ কোটি টাকা মূল্যের এসইউভি গাড়ির সঙ্গে প্রহ্লাদ কুমারের সিমেন্ট মিক্সার ট্রাকের সামান্য সংঘর্ষ হয়। এসইউভিটি পূজা অটোমোবাইলস নামক একটি সংস্থার নামে নথিভুক্ত, যার মালিকানা খেদকর পরিবারের। গাড়িতে ছিলেন পূজার বাবা দিলীপ খেদকর এবং পরিবারের দেহরক্ষী প্রফুল্ল সালুংখে। বচসার পর, তারা কুমারকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার নাম করে জোর করে গাড়িতে তুলে পুনের চতুর্শৃঙ্গী এলাকার তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
ট্রাকের মালিক বিলাস ধেংরে রাবালি থানায় অভিযোগ দায়ের করলে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ধারা ১৩৭(২) অনুযায়ী অপহরণের মামলা নথিভুক্ত করা হয়। পুলিশ প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে এসইউভিটির অবস্থান চিহ্নিত করে। এরপর পুনে ও নাভি মুম্বাই পুলিশের একটি যৌথ দল খেদকরের বাংলোতে অভিযান চালায়।
অভিযান চলাকালীন, পূজার মা মনোরমা খেদকর পুলিশকে বাধা দেন, অভিযুক্তদের পালানোর সুযোগ করে দিতে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেন। তবে পুলিশ নিরাপদে কুমারকে উদ্ধার করে নাভি মুম্বাইয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
দিলীপ খেদকর, মনোরমা খেদকর এবং প্রফুল্ল সালুংখের বিরুদ্ধে অপহরণ ও অবৈধভাবে আটকে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। মনোরমার বিরুদ্ধে পুলিশি কাজে বাধা দেওয়ার জন্য বিএসএস-এর ২২১, ২৩৮, এবং ২৬৩ ধারায় অতিরিক্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৯শে সেপ্টেম্বর প্রফুল্ল সালুংখেকে ধুলে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে দিলীপ ও মনোরমা খেদকর এখনো পলাতক।
উল্লেখ্য, পূজা খেদকর নিজে এই ঘটনায় সরাসরি যুক্ত নন। তবে এই ঘটনাটি তার পরিবারের অতীতের বিতর্কিত ইতিহাসকে আবার সামনে এনেছে। এর আগে, পূজার মা মনোরমার একটি ভাইরাল ভিডিওতে জমি বিরোধ নিয়ে বন্দুক হাতে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল। পরিবারের বিরুদ্ধে জমি দখল এবং অপরাধমূলক ভয় দেখানোর অভিযোগও রয়েছে।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। @ShivAroor-এর মতো ব্যবহারকারীরা খেদকর পরিবারকে একটি “আসল মাফিয়া” বলে অভিহিত করেছেন, যারা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সুরক্ষিত। অন্যদিকে, @mxtaverse নেটফ্লিক্সে তাদের জীবনীর উপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। সমাজকর্মী বিজয় কুম্ভার, যিনি প্রথম পূজার জালিয়াতি প্রকাশ করেছিলেন, তিনি পরিবারের সুরক্ষায় থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহি চেয়েছেন।
পুলিশের তদন্ত এখনো চলছে এবং তারা এই ঘটনাটি খেদকর পরিবারের আরও বড়ো কোনো অপরাধের অংশ কিনা তা খতিয়ে দেখছে। দিল্লির পুলিশ, যারা পূজার ইউপিএসসি জালিয়াতি মামলার তদন্ত করছে, তারা পরিবারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও তাদের তদন্তের পরিধি বাড়াতে পারে। এই ঘটনার পর খেদকরদের কথিত দায়মুক্তির বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে।