কলকাতা: কলকাতায় অনুষ্ঠিতব্য প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনের আপত্তির মুখে স্থগিত করা হয়েছে। ‘উর্দূ ইন হিন্দি সিনেমা’ শীর্ষক চার দিনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল পশ্চিমবঙ্গ উর্দূ আকাদেমি। এই স্থগিতাদেশের ফলে সংস্কৃতিপ্রেমী ও মুক্তচিন্তার পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ এবং ওয়াহাইন ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি মুসলিম সংগঠন জাভেদ আখতারকে আমন্ত্রণ জানানোর তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের অভিযোগ, জাভেদ আখতারের নাস্তিকতাবাদী বিশ্বাস এবং অতীতে করা মন্তব্যগুলি তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। এই সংগঠনগুলো অনুষ্ঠান বন্ধের হুমকি দিলে উর্দূ আকাদেমি “অনিবার্য কারণ” দেখিয়ে অনুষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। তবে সূত্রমতে, সম্ভাব্য অশান্তি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় জাভেদ আখতার নিজেও হতাশা প্রকাশ করেছেন, তবে তিনি বলেছেন যে এই ধরনের বিরোধিতা প্রমাণ করে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন। উর্দূ আকাদেমির এই পদক্ষেপকে কলকাতার সংস্কৃতিমহল এবং মুক্তমনা মানুষরা সেন্সরশিপ এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।
বামপন্থী দলগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং কলকাতায় প্রতিবাদ কর্মসূচি করার পরিকল্পনা করছে। সিপিআই(এম)-এর মতো দলগুলো এটিকে মৌলবাদী শক্তির কাছে সরকারের নতিস্বীকার হিসেবে দেখছে। তারা বুদ্ধিজীবী, লেখক ও ধর্মনিরপেক্ষ কর্মীদের একত্রিত করে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।
ঘটনার পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের নীরবতা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে টিএমসি রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকে বলি দিচ্ছে। এই নীরবতাকে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর কাছে সরকারের আত্মসমর্পণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের মধ্যে ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।