বেইজিং, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে এক জাঁকজমকপূর্ণ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি শুধু ঐতিহাসিক বিজয়ের স্মরণ নয়, বরং চীনের সামরিক শক্তি ও বৈশ্বিক প্রভাব প্রদর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
এই আয়োজনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ ২৬টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূ-রাজনৈতিক আলোচনার নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী
কুচকাওয়াজে চীন তাদের সর্বশেষ সামরিক প্রযুক্তির প্রদর্শন করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
- হাইপারসনিক অস্ত্র
- আন্ডারওয়াটার ড্রোন
- উন্নত গোয়েন্দা ও যুদ্ধ ব্যবস্থা
বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে ডিএফ-৫ আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা চীনের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া ডিএফ-২৬ মধ্যম-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও নতুন ধরনের অ্যান্টি-শিপ মিসাইল ‘ইয়িং জি’ প্রদর্শনও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের নজর কেড়েছে।
কূটনৈতিক সংহতি ও ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য
যদিও পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ নেতা অনুপস্থিত ছিলেন, পুতিন ও কিম জং উনের উপস্থিতি ভিন্ন এক কূটনৈতিক বার্তা দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই অংশগ্রহণ চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংহতির ইঙ্গিত বহন করছে।
অনেকে একে পশ্চিমা-বিরোধী জোটের সম্ভাব্য রূপরেখা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন এটি মূলত চীনের জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রদর্শনের একটি স্বাভাবিক প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই কুচকাওয়াজকে চীনের একটি ‘বিশ্বমঞ্চের মুহূর্ত’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চেয়েছে।
এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং আবাসন খাতের সংকট থেকে জনমত সরিয়ে জাতীয়তাবাদী আবেগ জাগ্রত করার কৌশল হিসেবেও অনেক বিশ্লেষক এ আয়োজনকে ব্যাখ্যা করছেন।
তাইওয়ান ও জাপানের প্রতিক্রিয়া
চীনের এই কুচকাওয়াজের কড়া সমালোচনা করেছে তাইওয়ান। তাদের অভিযোগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রকৃত অবদান না রাখলেও আজ তারা কৃতিত্ব দাবি করছে।
অন্যদিকে, জাপান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই আয়োজনে যোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। টোকিওর মতে, এ ধরনের অনুষ্ঠান জাপান-বিরোধী মনোভাব উসকে দেয়।
তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত এই সামরিক কুচকাওয়াজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। নিঃসন্দেহে, এটি ভবিষ্যতের ভূ-রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।