" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: মিত্রশক্তির বিজয়কে ত্বরান্বিত করে প্রাচ্যের রণক্ষেত্র The Forgotten Front: China's Crucial Contribution to the Allied WWII Victory //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: মিত্রশক্তির বিজয়কে ত্বরান্বিত করে প্রাচ্যের রণক্ষেত্র The Forgotten Front: China's Crucial Contribution to the Allied WWII Victory

 



বেইজিং: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে চীনের ভূমিকা প্রায়শই অবহেলিত থেকে যায়, কিন্তু জাপান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দেশটির সুদীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী লড়াই মিত্রশক্তির চূড়ান্ত বিজয়ে একটি অপরিহার্য অংশ ছিল। ১৯৩৭ সালে মার্কো পোলো সেতুতে ঘটনার পর থেকে ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত চীন এশিয়ার মূল রণক্ষেত্র হিসেবে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং অবিচ্ছিন্ন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল।




যুদ্ধের সূচনা ও জাপানি আগ্রাসন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ইউরোপে ১৯৩৯ সালে হলেও, চীনে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এরও আগে। ১৯৩১ সালে মাঞ্চুরিয়ায় জাপানের আগ্রাসন একটি বড় যুদ্ধের পূর্বাভাস দিয়েছিল, যা ১৯৩৭ সালের ৭ই জুলাই বেইজিংয়ের কাছে মার্কো পোলো সেতুতে সংঘর্ষের পর পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। এই যুদ্ধকে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ বলা হয়। চীনের জাতীয়তাবাদী (কুওমিনতাং) এবং কমিউনিস্ট উভয় বাহিনী তাদের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ভুলে জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।


কৌশলগত প্রতিরোধ এবং বিশাল ক্ষয়ক্ষতি

চীনের কৌশল ছিল প্রতিরোধের মাধ্যমে জাপানের শক্তিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেওয়া। সাংহাই, নানচিং এবং উহান-এর মতো বড় বড় শহরে ব্যাপক যুদ্ধ হয়, যেখানে উভয় পক্ষেই বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ১৯৩৭ সালের নানচিং গণহত্যা (Nanjing Massacre) ছিল এই যুদ্ধের অন্যতম কুখ্যাত নৃশংসতা। এই যুদ্ধ দীর্ঘ হওয়ায় জাপানকে চীনের মূল ভূখণ্ডে ১০ লাখেরও বেশি সৈন্য মোতায়েন রাখতে হয়েছিল। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের অভিযান সীমিত হয়ে পড়ে এবং মিত্রশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় লাভ হয়। চীনের এই প্রতিরোধী মনোভাব জাপানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর আক্রমণ থেকে বিরত রাখতেও সাহায্য করেছিল।




বার্মায় চীনা অভিযানকারী বাহিনী (Chinese Expeditionary Force - CEF)

সীমান্তের বাইরেও চীনের যুদ্ধ প্রচেষ্টা বিস্তৃত ছিল। বার্মায় চীনা অভিযানকারী বাহিনী (CEF) ছিল এই যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মিত্রশক্তির সরবরাহ পথ রক্ষা এবং জাপানি অগ্রাভিযান প্রতিরোধের জন্য গঠিত হয়েছিল।

গঠন ও উদ্দেশ্য

১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে, জাতীয়তাবাদী সেনাবাহিনীর অংশ থেকে গঠিত এক লক্ষেরও বেশি সৈন্যের এই বাহিনী বার্মায় পাঠানো হয়েছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বার্মা রোডকে সুরক্ষিত রাখা, যা চীনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রশক্তির সরবরাহ পথ ছিল। একই সঙ্গে ব্রিটিশ ও আমেরিকান বাহিনীর সাথে মিলে জাপানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করাও এর লক্ষ্য ছিল।

প্রধান অভিযান ও সামরিক কার্যক্রম

  • প্রথম বার্মা অভিযান (১৯৪২): ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিইএফ বার্মায় প্রবেশ করে এবং টাউনগু ও ইয়েনানজিয়াং-এর মতো স্থানে জাপানিদের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। প্রাথমিক সাফল্য সত্ত্বেও, যার মধ্যে ব্রিটিশ বাহিনীকে ঘেরাও থেকে উদ্ধার করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, মিত্রশক্তির পশ্চাদপসরণের কারণে এই অভিযান শেষ পর্যন্ত পিছু হটাতে বাধ্য হয় এবং জাপানিরা গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয়। অনেক চীনা সৈন্যকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ভারতে বা ইউন্নান প্রদেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, যেখানে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

  • দ্বিতীয় বার্মা অভিযান (১৯৪৩-১৯৪৫): ভারতে আমেরিকান উপদেষ্টাদের দ্বারা পুনরায় সংগঠিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে চীনা বাহিনী (বিশেষত এক্স ফোর্স এবং ওয়াই ফোর্স) মিত্রশক্তির পাশাপাশি বার্মায় ফিরে আসে। তারা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশ নেয়, ১৯৪৪ সালে মিটকিনাকে দখল করে, এবং লেডো রোডসহ স্থলপথগুলো পুনরায় খুলে দিতে সাহায্য করে, যা চীনের সাথে সরবরাহ পথ আবার চালু করে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে চীনা বাহিনী বার্মা ও ইউন্নান উভয় দিক থেকে সমন্বিত হামলা চালায়, বহু সংঘর্ষে জাপানি সৈন্যদের পরাজিত করে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনে।



অবদান ও প্রভাব

বার্মায় সিইএফ-এর অভিযান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনের প্রতিরোধকে টিকিয়ে রাখতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্রশক্তির কৌশলকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাদের অবদানের মধ্যে ছিল কঠিন যুদ্ধ, মিত্র বাহিনীর সৈন্যদের উদ্ধার, এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দীর্ঘস্থায়ী জঙ্গলের যুদ্ধে ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার। তাদের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পথগুলোকে সুরক্ষিত করে, জাপানি অগ্রাভিযান ব্যাহত করে, এবং চীন-বার্মা-ভারত রণক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।


মিত্রশক্তির সঙ্গে সহযোগিতা ও কূটনৈতিক স্বীকৃতি

১৯৪১ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগ দেয়, তখন চীন তাদের কাছ থেকে লেন্ড-লিজ অ্যাক্টের অধীনে ব্যাপক সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাহায্য পেতে শুরু করে। চীনের সৈন্যরা বার্মা-রোড তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মিত্রশক্তির জন্য ভারত থেকে চীনে সামরিক সরবরাহ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, চীনকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি "বিগ ফোর" বা চারটি প্রধান মিত্রশক্তির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মর্যাদা চীনকে জাতিসংঘ (United Nations) গঠনের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন দেয়।




যুদ্ধের পরবর্তী প্রভাব ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

যুদ্ধে বিশাল ত্যাগের (সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল) পরেও চীনের জাতীয়তাবাদী সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে যুদ্ধের পর কমিউনিস্ট ও জাতীয়তাবাদী বাহিনীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত কমিউনিস্টদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। অনেক পশ্চিমা ইতিহাসে চীনের এই বিশাল ভূমিকা প্রায়শই আড়ালে থেকে যায়, কিন্তু ইতিহাসবিদরা চীনের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধকে জাপানের চূড়ান্ত পরাজয়ে একটি অপরিহার্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। চীন শুধু নিজের ভূখণ্ড রক্ষা করেনি, বরং এটি বিশ্ব শান্তি এবং যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।



Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies