দার্জিলিং-এর পাহাড়ে ধসের বীভৎস ক্ষত যখন হাহাকার সৃষ্টি করেছে, তখন সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম)। ত্রাণ শিবিরে সন্তানহারা মা'দের কান্না এবং বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আর্তনাদের মধ্যে দলটির কর্মীরা অক্লান্তভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য জোরালো সওয়াল করছে। এটি শুধু দলীয় কর্তব্য নয়, বরং এক গভীর মানবিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
ত্রাণ ও পাশে দাঁড়ানোর চিত্র
মিরিকের কাছে সৌরেনি বা বিষ্ণুলাল গাঁও অঞ্চলের মতো যেখানে ধসের আঘাত সবচেয়ে তীব্র, সেখানে প্রথমেই পৌঁছেছে কমরেড সমন পাঠকের নেতৃত্বে সিপিআই(এম) টিমটি। এই দলের সদস্যরা – অনাদি সাহু, ময়ূখ বিশ্বাস, সচিন খাতি, সৌরভ দাস, উদয়ন দাসগুপ্ত, কিসমত তামাং, উত্তর শর্মা, চেতন গুরুং, রাজেশ ছেত্রী, রেজিনা রাই, অঙ্কিত দে সহ স্থানীয় নেতৃত্ব—কেবল শুকনো খাবার বা ত্রিপল বিতরণ করেই ক্ষান্ত হননি; তারা প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের দুর্দশা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
সন্তানহারা মা'দের পাশে: আট বছরের আয়ূষি ছেত্রীর মতো যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি নিয়ে দাঁড়িয়েছে দলটি।
অনাথদের দায়িত্ব: ন মাইল অঞ্চলের শিবিরে অনাথ হয়ে পড়া দুই ভাইবোনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছে দলের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ।
এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির লড়াই প্রায়শই ত্রাণ কার্যে বাধা সৃষ্টি করে, সেখানে সিপিআই(এম)-এর সদস্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দুর্গতদের কাছে পৌঁছানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
পুনর্বাসন এবং সুদূরপ্রসারী দাবি
ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি, দলটির মূল ফোকাস এখন সুদূরপ্রসারী পুনর্বাসনের ওপর। থরবু বাগানের লোয়ার ডিভিশনের যে ছয়টি পরিবার ঘর সম্পূর্ণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে সিপিআই(এম)। এটি কেবল তাৎক্ষণিক সাহায্য নয়, বরং মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার।
সিপিআই(এম)-এর গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলি হলো:
১. এই পরিস্থিতিকে অবিলম্বে 'জাতীয় বিপর্যয়' ঘোষণা করা হোক, যাতে কেন্দ্রীয় স্তরের সাহায্য দ্রুত পৌঁছাতে পারে।
২. আক্রান্তদের পুনর্বাসন এবং যারা ঘর হারিয়েছেন তাদের নতুন করে থাকার ব্যবস্থা করা।
৩. দীর্ঘদিনের বঞ্চনার শিকার চা বাগানের শ্রমিকদের জমি দেওয়ার দাবি—যাতে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয়ে তারা কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকতে পারেন।
সব মিলিয়ে, পাহাড়ের এই কঠিন সময়ে সিপিআই(এম) শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং ত্রাতা এবং আশার আলো হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে। সমস্ত প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, তারা মানুষের পাশে থেকে তাদের লড়াইয়ে সামিল হয়েছে।