" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫: সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূ ও ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্রের স্বীকৃতি – মারিয়া কোরিনা মাচাদোর জয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্ক //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫: সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূ ও ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্রের স্বীকৃতি – মারিয়া কোরিনা মাচাদোর জয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্ক

 



রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের এক নতুন অধ্যায়

২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভেনিজুয়েলার কট্টর বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তির আদর্শকে ছাপিয়ে ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়েছে বলে মনে করছেন প্রগতিশীল ও বামপন্থী রাজনৈতিক মহল। কমিটি মাচাদোর 'গণতান্ত্রিক অধিকার' এবং 'শান্তিপূর্ণ উত্তরণের' সংগ্রামকে সম্মান জানালেও, এই পুরস্কারকে ভেনিজুয়েলার বৈধ, নির্বাচিত 'শ্রমিক-শ্রেণির সরকার'-কে অস্থিতিশীল করার মার্কিন-নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার প্রতি আন্তর্জাতিক বৈধতা দেওয়ার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।



মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে পুরস্কৃত


নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসে এর আগেও এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে, যখন পশ্চিমা শক্তিগুলির পররাষ্ট্রনীতিকে সমর্থনকারী ও সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, মাচাদোর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরস্কার না পেলেও, মাচাদোর বিজয়কে কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই কট্টরপন্থীদের হাতেই কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছে, যারা দীর্ঘকাল ধরে ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করতে চেয়েছেন।

  • মনরো ডকট্রিনের প্রতিফলন: ল্যাটিন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের দীর্ঘ ইতিহাস, যা তথাকথিত 'মনরো ডকট্রিন'-এর নামে পরিচিত, মাচাদোর এই পুরস্কারের মাধ্যমে নতুন করে বৈধতা পেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মাচাদো এমন এক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন, যা দেশের সমাজতান্ত্রিক বা বলিভারীয় মডেলের তীব্র বিরোধী এবং কার্যত নব্য-উদারনৈতিক (Neoliberal) অর্থনৈতিক নীতির সমর্থক। বামপন্থী দলগুলির দাবি, এই পুরস্কারের মাধ্যমে মাদুরো সরকারকে উৎখাত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা এবং হুমকি-ধামকির নীতিগুলিকে পরোক্ষভাবে নৈতিক সমর্থন জানানো হয়েছে।

  • বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে স্বীকৃতি: মাচাদো সরকারের বিরুদ্ধে চরমপন্থী এবং প্রায়শই অসাংবিধানিক পদ্ধতির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়েছেন বলে পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে, তাঁকে 'শান্তি পুরস্কার' প্রদান করাকে অনেকেই ভেনিজুয়েলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিদেশি-সমর্থিত শক্তিকে চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। পুরস্কারটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে এমন একটি শক্তিকে সামনে এনে দিল, যারা সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।


বামপন্থী ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির তীব্র নিন্দা: শান্তির ছদ্মবেশ


ভেনিজুয়েলার ক্ষমতাসীন দল এবং অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি এই নোবেল কমিটিকে কঠোরভাবে আক্রমণ করেছে। তাদের মতে, শান্তির এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তারা মনে করেন, হোয়াইট হাউস যখন নোবেল কমিটিকে 'শান্তির চেয়ে রাজনীতি'কে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য সমালোচনা করছে, তখন বামপন্থী দলগুলোর কাছে এই 'রাজনীতি' হলো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের অনুমোদন।


  • অগণতান্ত্রিক উপায়ে পরিবর্তনের প্রচেষ্টা: ক্ষমতাসীন দলগুলি মনে করে, মাচাদোর মতো এমন একজন ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে 'অগণতান্ত্রিক উপায়ে' উৎখাত করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ও সামরিক হুমকির পক্ষে কথা বলেন। এটি শান্তি নয়, বরং একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অবৈধ হস্তক্ষেপের পুরস্কার। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে কীভাবে আন্তর্জাতিক সম্মাননাগুলিও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হতে পারে।


  • বৈশ্বিক প্রতিবাদ: শুধু ভেনিজুয়েলা নয়, কিউবা, নিকারাগুয়া এবং আরও কিছু উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের মতে, যখন বিশ্বজুড়ে সামরিক সংঘাতের আগুন জ্বলছে, তখন নোবেল কমিটির উচিত ছিল প্রকৃত শান্তি, সংহতি ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত কাউকে পুরস্কৃত করা। তার বদলে, এমন একজন ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হলো, যার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপকে আমন্ত্রণ জানায় এবং যুদ্ধের উস্কানিদাতাদের নীতিকে সমর্থন করে।


নোবেল মঞ্চে রাজনৈতিক বিভেদ


ফলস্বরূপ, ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিশ্বব্যাপী ঐক্যের প্রতীক হওয়ার পরিবর্তে গভীর মেরুকরণের একটি উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো। এটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিলো যে কীভাবে আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলিও ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। মারিয়া কোরিনা মাচাদোর জয় কেবল ভেনিজুয়েলার বিরোধীদের মনোবল বাড়ালো না, বরং মার্কিন-সমর্থিত হস্তক্ষেপমূলক নীতিগুলিকে আরও বেশি করে বৈধতা দিল – যা প্রকৃত শান্তির আদর্শের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। বামপন্থী মহল মনে করে, এই পুরস্কারটি হলো একটি 'যুদ্ধবাজ' নীতির সমর্থককে দেওয়া একটি রাজনৈতিক পুরষ্কার, যা আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies