🕊️ স্মরণে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় কমরেড ব্রজমানিক চক্রবর্তী: এক নক্ষত্রের পতন, তবু জ্বলছে আলো 🕊️Workers Pay Tribute to Leader Brojomanik

দুর্গাপুর:

আজ হিন্দুস্তান স্টীল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (HSEU) অ্যালয় স্টীল প্ল্যান্ট (A.S.P.) শাখা অফিসে যেন এক ঐতিহাসিক নীরবতা নেমে এসেছিল। শোক আর শ্রদ্ধার এক আশ্চর্য মিশ্রণে ভরা ছিল প্রতিটি শ্রমিকের চোখ। কারণ, আজ তাঁরা কেবল একজন নেতাকে স্মরণ করেননি, স্মরণ করেছেন তাঁদের কমরেড, তাঁদের শিক্ষক, তাঁদের দীর্ঘদিনের অভিভাবক ব্রজমানিক চক্রবর্তীকে।

সময়ের পরিক্রমায় যাঁরা কর্মস্থল ছেড়েছেন, সেই পুরোনো সতীর্থ, যাঁরা আজও আন্দোলনের মশাল ধরে আছেন, সেই বর্তমান নেতৃত্ব, সকলেই যেন এক অদৃশ্য আকর্ষণে ছুটে এসেছিলেন তাঁদের প্রিয় সহযোদ্ধাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ভিড় নয়, যেন ছিল এক নীরব শপথের মহামিলন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ইউনিয়নের সভাপতি বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সিআইটিইউ-র কেন্দ্রীয় নেতা ললিত মোহন মিশ্র মঞ্চে উপবিষ্ট হন। তবে সবচেয়ে ভারী হয়ে ছিল কমরেডের পরিবারের উপস্থিতি— তাঁর ভাগ্নে অশেষ মিত্রের চোখও যেন খুঁজছিল তাঁর মামার সেই পরিচিত বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। কমরেডদের পক্ষ থেকে যখন তাঁর ছবিতে মাল্যদান করা হলো, তখন সেই মুহূর্তের গভীরতা উপলব্ধি করে অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

স্মরণসভার মূলপর্বে প্রাক্তন শ্রমিক নেতা কে কে পাল, কল্যাণ বোস, সুখময় বোস, মলয় ভট্টাচার্য এবং অশেষ মিত্র যখন একে একে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন বারবার ফিরে আসছিল কমরেডের জীবনের সেইসব সোনালী অধ্যায়। 

তাঁরা শোনালেন কীভাবে ব্রজমানিক চক্রবর্তী শুধু কারখানার শ্রমিকদের অধিকারের জন্য লড়েননি, তিনি ছিলেন শোষিত মানুষের ভরসা, ন্যায় প্রতিষ্ঠার এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। তাঁর আপসহীন সংগ্রাম, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং শ্রমিক শ্রেণীর প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা— এই স্মৃতিচারণায় প্রতিটি বক্তাই যেন বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে উঠছিলেন। বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতা গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে শোক প্রস্তাব পাঠ করলেন, তখন উপস্থিত সবার হৃদয়েই বাজছিল বিদায়ের করুণ সুর।

উপস্থিত কর্মী ও নেতৃত্বের চোখে ছিল এক দৃঢ় অঙ্গীকার। তাঁরা শপথ নিলেন, ব্রজমানিক চক্রবর্তী যে আদর্শের মশাল তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন, সেই আলো কখনো নিভতে দেওয়া হবে না। তাঁর দেখানো পথেই তাঁরা মাথা উঁচু করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে চলবেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুর পূর্বের প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ দেব রায় ।

আজকের এই স্মরণসভা কেবল একটি শোকসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। এটি ছিল লাল সেলামের মাধ্যমে এক কিংবদন্তী নেতাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার এক আবেগঘন প্রয়াস।

কমরেড ব্রজমানিক চক্রবর্তী! আপনার নশ্বর দেহ আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আপনার আদর্শ ও সংগ্রাম এই কারখানার প্রতিটি কোণে, প্রতিটি শ্রমিকের হৃদয়ে চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

---