বেইজিং, চীন—লিঙ্গ সমতা এবং নারী উন্নয়নের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় নতুন গতি আনতে, চীন এবং ইউএন উইমেন (UN Women)-এর যৌথ উদ্যোগে বেইজিং-এ ১৩-১৪ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে গ্লোবাল লিডারস' মিটিং অন উইমেন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এই উচ্চ-পর্যায়ের সেমিনারে বিশ্বের কয়েক ডজন রাষ্ট্রনেতা এবং নীতিনির্ধারক অংশ নিয়েছেন।
মূল প্রতিশ্রুতি ও নেতার বক্তব্য
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধান বক্তব্য রাখেন এবং নারী ক্ষমতায়নকে তাঁর নেতৃত্ব দূরদর্শিতার একটি মূল উপাদান হিসেবে জোর দেন।
বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাতে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে: ইউএন নারী উন্নয়ন তহবিলের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার অনুদান। এই আর্থিক প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরে বেশ কিছু বাস্তব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে:
বিশ্বব্যাপী নারীদের জন্য ১,০০০ জীবিকামূলক প্রকল্পে সহায়তা।
বিনিময় ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য ৫০,০০০ নারীকে চীনে আমন্ত্রণ।
এই সম্মেলনটির লক্ষ্য হলো ১৯৯৫ সালের বেইজিং ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা-এর বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করা। নেতারা লিঙ্গ সমতার বিষয়ে ঐকমত্য গঠন, উন্নয়নের বৃহত্তর পথ তৈরি এবং নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেন।
চীন একটি 'রোল মডেল' হিসেবে উপস্থাপিত
সম্মেলনে নারী ক্ষমতায়নে চীনের অভ্যন্তরীণ অগ্রগতিকে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম চীনকে নারী অধিকারের ক্ষেত্রে একটি "রোল মডেল" হিসেবে বর্ণনা করেছে। চীন তার উল্লেখযোগ্য কিছু অগ্রগতি উপস্থাপন করেছে:
কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ: বর্তমানে কর্মশক্তির প্রায় ৪৩% নারী।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: চীনে প্রায় ৪৬% বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পেশাদার হলেন নারী।
আইন ও কাঠামো: নারী অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় চারটি জাতীয় নারী উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি ১০০টিরও বেশি আইন ও প্রবিধান কার্যকর করা হয়েছে।
এছাড়াও, চীন ইউএন উইমেনের প্রতি সমর্থন, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং ১৮০টি দেশের ২ লাখেরও বেশি নারী পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নারী উন্নয়নে তার স্বতন্ত্র অবদান তুলে ধরে।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ
সম্মেলনে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ছিল মূলত ইতিবাচক। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা চীনের অগ্রগতিকে প্রশংসা করেছেন এবং নারী উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়ের আশা প্রকাশ করেছেন। ঘানার প্রেসিডেন্ট জন ড্রামানি মাহামা, ডোমিনিকার প্রেসিডেন্ট সিলভানি বার্টন এবং মোজাম্বিকের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তবে, কিছু সমালোচক এখনও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তারা মনে করেন, অগ্রগতি সত্ত্বেও, চীনের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীদের কম প্রতিনিধিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেখানে সংস্কার প্রয়োজন। কিছু সমালোচক বৃহত্তর রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করতে সংবিধিবদ্ধ কোটার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে, এই সেমিনারটি চীনকে অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রে নারী ক্ষমতায়নের ভবিষ্যত নীতি নির্ধারণে একটি কেন্দ্রীয় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটি নারী অধিকার সুরক্ষা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বানকে নতুন করে জোরদার করেছে।