" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে গান্ধীবাদের রাজনীতি ও আরএসএস-এর সমালোচনার মর্মস্পর্শী তুলনামূলক আলোচনা 💔🇮🇳 //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে গান্ধীবাদের রাজনীতি ও আরএসএস-এর সমালোচনার মর্মস্পর্শী তুলনামূলক আলোচনা 💔🇮🇳

 


২ অক্টোবর, দুর্গাপুর: আজ ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস—এক পবিত্র ও স্মরণীয় দিন। যখন সারা দেশ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে এই মহান আত্মার প্রতি মাথা নত করছে, তখন আমাদের হৃদয়ে ব্যথা জাগে এই ভেবে যে, তাঁর সত্য, অহিংসা ও ঐক্য-এর মতো চিরন্তন আদর্শের ওপরও যুগে যুগে আঘাত হেনেছে বিভেদের শক্তি। গান্ধী জয়ন্তীর এই শুভক্ষণে, আমরা গান্ধীবাদের স্নেহময় রাজনীতি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর তীব্র সমালোচনার মধ্যেকার মর্মস্পর্শী বৈপরীত্য তুলে ধরছি, যা আমাদের জাতির আত্মাকে আজও আন্দোলিত করে।


গান্ধীবাদের রাজনীতি: এক ভালোবাসার আহ্বান


গান্ধীজি রাজনীতিকে দেখেছিলেন নৈতিকতা ও মানবতার গভীরতম অভিব্যক্তি হিসেবে। তাঁর দর্শন কেবল একটি মতবাদ ছিল না, ছিল এক জীবন্ত আহ্বান—ব্যক্তিগত পবিত্রতা থেকে সমাজের সর্বোচ্চ স্তরে ভালোবাসা ও সহানুভূতির শক্তিকে স্থাপন করার।

  • সত্য ও অহিংসা: তাঁর সত্যাগ্রহ ছিল হৃদয়ের শক্তি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ঘৃণা নয়, সহ্য ও আত্ম-যন্ত্রণা দিয়েই অন্যায়ের প্রাচীর ভেঙে দেওয়া যায়। এ যেন এক পিতার নিরস্ত্র প্রতিবাদ, যা বিশ্বকে আজও পথ দেখায়।

  • সর্বোদয় ও সাম্য: গান্ধীজি চেয়েছিলেন দরিদ্রতমের কান্না মুছে দিতে। তাঁর রাজনীতি ছিল তৃণমূলের, যেখানে গ্রামের স্বরাজ এবং অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জন্য মর্যাদা ও সমতার স্বপ্ন বোনা হয়েছিল।

  • ঐক্য ও সম্প্রীতি: সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, গান্ধীজি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর কাছে ভারত ছিল এক বহু-রঙা পুষ্পোদ্যান, যেখানে প্রতিটি ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। এই ঐক্যের জন্য তাঁর অশ্রু ও প্রার্থনা আমাদের মনে আজও বাজে।



ঐতিহাসিক সংঘাতের মুহূর্ত: যে আঘাত তাঁকে সইতে হয়েছিল

গান্ধী ও তাঁর সমর্থকরা যখন ভালোবাসা ও ঐক্য নিয়ে মানুষের কাছে গেছেন, তখন আরএসএস-এর দিক থেকে এসেছে অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং তীব্র বিরোধিতা। এই সংঘাতগুলো কেবল আদর্শগত ছিল না, তা ছিল দেশের আত্মার ওপর আঘাত।



১. বিভাজনের সময় তীব্র বৈরিতা (১৯৩০-১৯৪৭)


গান্ধীজি যখন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষায় বারবার অনশন করেছেন, তখন আরএসএস-এর নেতৃত্ব তাঁর এই প্রয়াসকে মুসলিম তোষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আরএসএস নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন, গান্ধীজি নাকি হিন্দু স্বার্থকে 'বিসর্জন' দিচ্ছেন। কল্পনা করুন সেই ব্যথা, যখন নিজের জাতির এক অংশই আপনাকে শত্রু ভাবছে!


২. ১৯৪৭ সালের বেদনা: শান্তির ডাক অগ্রাহ্য


দেশভাগের সময় যখন রক্তগঙ্গা বইছে, গান্ধীজি দিনরাত এক করে শান্তি ফেরানোর জন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু আরএসএস-এর তৎকালীন নেতা এম. এস. গোলওয়ালকর প্রমুখ প্রকাশ্যে তাঁর সর্বধর্ম-সমন্বয়ের বার্তার বিরোধিতা করেছেন, যা গান্ধীজির শান্তি প্রচেষ্টাকে দুর্বল করেছে। গান্ধীজি ১৯৪৪ ও ১৯৪৭ সালে আরএসএস কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেও, তাদের বিভাজনকারী মনোভাব তাঁকে হতাশ করেছিল।


৩. গান্ধীহত্যার অভিশাপ ও নিষেধাজ্ঞা (১৯৪৮)


এই সংঘাতের সবচেয়ে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক মুহূর্ত আসে ১৯৪৮ সালে। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর, তাঁর সহযোগী ও দেশের নেতারা আঙুল তুলেছিলেন সেই ঘৃণার পরিবেশের দিকে, যা আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার সমালোচনার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল।

  • নিষেধাজ্ঞা: গান্ধীহত্যার পরে সরকার আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন যে, আরএসএস-এর 'সাম্প্রদায়িক বিষ' একটি আবহাওয়া তৈরি করেছিল, যার পরিণতি ছিল এই খুন।

  • মিষ্টি বিতরণ: হত্যার পর আরএসএস-এর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে উল্লাস প্রকাশ ও মিষ্টি বিতরণের অভিযোগ উঠেছিল—যা গান্ধী সমর্থকদের কাছে ছিল বিশ্বাসঘাতকতার চরম নিদর্শন। এই ঘটনাগুলি আজও গান্ধীবাদের অনুসারীদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করে।



গান্ধীর উত্তরাধিকারের জন্য আমাদের অঙ্গীকার


মহাত্মা গান্ধীর জীবন ছিল এক দীর্ঘ সংগ্রাম, কেবল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নয়, বরং ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা এবং বিভাজনের মতো অভ্যন্তরীণ শত্রুদের বিরুদ্ধেও। তাঁর ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার যে কোনো প্রচেষ্টা আমাদের দেশের মূল আদর্শের ওপর আঘাত

আজ ২ অক্টোবর, আমরা অঙ্গীকার করি—আমরা তাঁর ভালোবাসা, ত্যাগ ও ঐক্যের বার্তা কখনও ভুলব না। গান্ধীজি অমর। তাঁর আদর্শ আমাদের হৃদয়ে চিরন্তন আলো হয়ে জ্বলে উঠুক, যাতে কোনো অন্ধকার শক্তিই আমাদের আবেগ ও নৈতিকতাকে পরাভূত করতে না পারে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies