বুক চিতিয়ে লড়াই! দেশের অপমান, নারী নির্যাতনের জবাব যেন ব্যাটেই দিল মেয়েরা: অস্ট্রেলিয়াকে দুমড়ে-মুচড়ে ফাইনালে ভারত, এ জয় শুধু ক্রিকেটের নয়, এক জ্বলন্ত শপথের!
 

দেশের শিরায় শিরায় যখন নারী নির্যাতনের রক্তক্ষরণ, দিনের আলোয় হাজারো অভিযোগের বিচার কেবলই অধরা স্বপ্ন, তথাকথিত 'সাধক' বা সমাজপতিদের কাছ থেকে অপমান আর লাঞ্ছনা যখন দেশের নারীদের নিত্যসঙ্গী—সেই ঘোর অন্ধকারের আবহেও দেশের প্রতিটি ঘরে চলছে দেবী রূপে নারীর বন্দনা। এই মর্মান্তিক বৈপরীত্যের সামনে দাঁড়িয়ে, বুক চিতিয়ে এক জবাব দিল ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল। এ যেন ব্যাট-বলের যুদ্ধ নয়, এ যেন সামাজিক অনাচার আর অবহেলার বিরুদ্ধে এক 'নীরব বিদ্রোহ'!
শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে এক শ্বাসরুদ্ধকর সেমিফাইনালে হারিয়ে আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৫-এর ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া—একথা শুধু ম্যাচের ফল নয়, বরং সমগ্র দেশের নারীশক্তির অদম্য প্রতিজ্ঞার প্রতীক।
চোখের জল মুছে জেমিমার মহাকাব্য:
নভি মুম্বাইয়ের ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৮ রানের বিশাল লক্ষ্য দেখে হয়তো অনেকের মনে সংশয় জেগেছিল। এ তো শুধু স্কোরবোর্ড নয়, যেন হিমালয়ের মতো কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ভারতের মেয়েরা পরাজয় মানতে শেখেনি। জেমিমা রদ্রিগেজ—তাঁর ব্যাটে যেন ছিল গোটা দেশের নারীদের চাপা কান্না আর না বলা জেদ! ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসটি কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি যেন অপমানের বিরুদ্ধে এক তীক্ষ্ণ শাণিত তলোয়ার।
জেমিমার সাথে অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের ৮৯ রানের ইনিংসটি ছিল নির্ভরতার আশ্রয়। প্রতিটি চার, প্রতিটি রান যেন দেশের প্রতিটি নির্যাতিতা নারীর নীরব প্রতিবাদের ভাষা। দীপ্তি শর্মা ও আমনজোত কৌরের শেষ মুহূর্তের দৃঢ়তা বুঝিয়ে দিল, ভারতীয় নারীরা শেষ বলে হার মানতে জানে না।
ভাঙা হলো অপমানের দেওয়াল:
এই জয় শুধু অস্ট্রেলিয়ার ১৫ ম্যাচের অপরাজিত ধারা ভাঙেনি, ভেঙে দিয়েছে সমাজের চোখে নারীর 'দুর্বলতা'-র মিথ। ২০১৭ সালের পর ফের বিশ্ব কাপের ফাইনালে প্রবেশ করল ভারত। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামবে তারা, হয়তো হাতে করে আনবে সেই সোনালী ট্রফি, যা দেশের প্রতিটি নারীর মুকুটে হবে হীরার ঔজ্জ্বল্য।
এই মুহূর্তে যখন এক হাতে দেবী রূপে নারীকে পূজা করা হয় আর অন্য হাতে চলে তার উপর অকথ্য অত্যাচার, তখন জেমিমা, হরমনপ্রীতরা প্রমাণ করলেন—নারী কেবল পূজার প্রতিমা নয়, সে স্বয়ং শক্তি, স্বয়ং তেজ! এ জয় যেন জাতির উদ্দেশ্যে এক প্রশ্ন ছুড়ে দিল—ক্রিকেটের মাঠে এই 'নারী শক্তিকে' যে সম্মান আমরা দিচ্ছি, তা কি দিতে পারছি বাস্তবের মাটিতে? এই বিজয় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য এক গভীর শপথ হোক—দেশের প্রতিটি নারী যেন তাদের প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।