" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ক্যান্সার কি শুধুই কোষের রোগ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আসল নিয়ন্ত্রণ আপনার মস্তিষ্কের হাতে! //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

ক্যান্সার কি শুধুই কোষের রোগ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আসল নিয়ন্ত্রণ আপনার মস্তিষ্কের হাতে!

 



ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মানবজাতির লড়াইটা বহুদিনের। এই লড়াইয়ের কথা ভাবলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে এক যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি, যেখানে আমাদের শরীর বিদ্রোহী কোষদের দখলে, আর কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মতো শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে সেই কোষগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কিন্তু কী হবে যদি এই যুদ্ধের ধারণাই বদলে যায়? যদি ক্যান্সারের সমাধান কোষ ধ্বংস করার মধ্যে নয়, বরং শরীরের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করে শান্তি ফিরিয়ে আনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে?

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মার্সড-এর অধ্যাপক নেস্টর ওভিয়েদোর যুগান্তকারী গবেষণা ঠিক এই নতুন সম্ভাবনার কথাই বলছে। তাঁর গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমাদের প্রধান সেনাপতি হতে পারে আমাদেরই মস্তিষ্ক। চলুন, এই গবেষণার প্রধান তিনটি যুগান্তকারী দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

১. ক্যান্সার শুধু কোষের রোগ নয়, আপনার মস্তিষ্কই হতে পারে এর নিয়ন্ত্রক

অধ্যাপক ওভিয়েদোর গবেষণার মূল ভিত্তি হলো এই ধারণা যে, মস্তিষ্ক শরীরে ক্ষতিকর কোষের রূপান্তর প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতে পারে। এই তত্ত্বটি পরীক্ষা করার জন্য, তাঁর দল প্ল্যানেরিয়ান ফ্ল্যাটওয়ার্ম (এক ধরনের চ্যাপ্টা কৃমি) নিয়ে একটি অসাধারণ পরীক্ষা চালায়।

গবেষকরা এই কৃমির শরীরের PTEN নামক একটি টিউমার দমনকারী জিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেন। উল্লেখ্য, মানুষের শরীরে হওয়া বিভিন্ন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই জিনটি প্রায়শই নিষ্ক্রিয় বা পরিবর্তিত অবস্থায় পাওয়া যায়। জিনটি নিষ্ক্রিয় করার মাত্র ১২ দিনের মধ্যে কৃমিগুলোর মধ্যে ক্যান্সারের সুস্পষ্ট লক্ষণ—যেমন অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি, টিস্যু আক্রমণ এবং টিউমারের মতো গঠন—দেখা যেতে শুরু করে।

অধ্যাপক নেস্টর ওভিয়েদো বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:

আমাদের প্রাথমিক তথ্য বলছে যে, স্নায়ুতন্ত্র থেকে আসা সংকেত সক্রিয় করে ক্যান্সারের মূল লক্ষণগুলো বেছে বেছে দূর করা সম্ভব... অন্য কথায়, মস্তিষ্কের আণবিক সুইচগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে এনে আমরা ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

২. ক্যান্সারের লক্ষণ দূর করা যেতে পারে নিউরাল সুইচ অন-অফ করার মতো

কিন্তু গবেষণার সবচেয়ে যুগান্তকারী মুহূর্তটি ছিল অন্যখানে। বিজ্ঞানীরা যখন এই ক্যান্সার-আক্রান্ত কৃমিগুলোর স্নায়বিক যোগাযোগে হস্তক্ষেপ করলেন, তখন যা ঘটল তা ছিল প্রায় অবিশ্বাস্য। কৃমিগুলোর ক্যান্সারের মতো লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে শুরু করে এবং কিছু কৃমি প্রায় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে! অর্থাৎ, কোনো কোষ না মেরেই, শুধু শরীরের অভ্যন্তরীণ সংকেত বদল করে ক্যান্সারের প্রভাবকে উল্টে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

এই আবিষ্কারটি "ক্যান্সার নিউরোসায়েন্স" নামক একটি নতুন গবেষণা ক্ষেত্রের উত্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের বিজ্ঞানীরাও একটি গবেষণায় দেখেছেন যে, ফুসফুসের ক্যান্সারের কোষগুলো মস্তিষ্কের নিউরনের সাথে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করে, যা টিউমারের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। এ থেকে বোঝা যায় যে, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে স্নায়ুতন্ত্রের ভূমিকা এখন বিশ্বজুড়ে গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

৩. ভবিষ্যতের চিকিৎসা হতে পারে কোষ ধ্বংসের বদলে শরীরের স্বাভাবিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করা

এই গবেষণা ক্যান্সার চিকিৎসার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। প্রচলিত চিকিৎসার মূল লক্ষ্য যেখানে বিদ্রোহী কোষগুলোকে সরাসরি ধ্বংস করা, সেখানে এই নতুন পদ্ধতি বলছে যে, শরীরের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করার মাধ্যমেও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এর একটি গভীর জীববৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। আমাদের শরীরের কোষগুলো, বিশেষ করে এপিথেলিয়াল টিস্যুর (যেখানে ৯০ শতাংশের বেশি ক্যান্সার শুরু হয়) কোষগুলো প্রতিনিয়ত প্রতিস্থাপিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য হলেও, এটিই ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে। প্ল্যানেরিয়ান কৃমির মডেলটি এখানে এক অভাবনীয় সুযোগ করে দিয়েছে। ইঁদুরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে যেখানে ক্যান্সারের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করতে কয়েক মাস সময় লাগে, সেখানে এই কৃমির শরীরে বিজ্ঞানীরা মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়াটি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন, যা গবেষণার গতিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

যদিও এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার হতে এখনও বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে, তবে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই এর সম্ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে এমন কিছু পুরোনো ঔষধকে ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন করে ব্যবহারের কথা ভাবছেন। অধ্যাপক ওভিয়েদোর গবেষণাটিও ২০৩০ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) দ্বারা অর্থায়ন পেয়েছে, যার অধীনে এই ধারণাগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মডেলে পরীক্ষা করা হবে।

শেষ কথা: ক্যান্সারকে বোঝার এক নতুন অধ্যায়

এই গবেষণা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ক্যান্সার কেবল একটি কোষীয় রোগ নয়। এটি এমন একটি জটিল অবস্থা যেখানে আমাদের পুরো শরীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র, ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বহু দশকের ‘যুদ্ধের’ পর আমরা হয়তো এমন এক ভবিষ্যতের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, যেখানে মূল লক্ষ্য হবে শরীরের হারানো ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা।

এই আবিষ্কার আমাদের একটি নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়: ক্যান্সার চিকিৎসার ভবিষ্যৎ কি আরও শক্তিশালী অস্ত্র আবিষ্কারের মধ্যে নিহিত, নাকি আমাদের শরীর তার নিজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যে ভাষা ব্যবহার করে, তা নতুন করে শেখার মধ্যে? উত্তর যা-ই হোক, বিজ্ঞানের এই নতুন যাত্রা নিঃসন্দেহে ক্যান্সার চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies