ঐতিহ্যবাহী আওয়াধী রান্নাঘর
লখনউয়ের গোলাপি শীত আর ‘রসাওয়াল’: এক হারানো শৈশবের আখ্যান
লখনউয়ের আকাশে যখন ‘গোলাপি ঠাণ্ডা’র আমেজ দেখা দেয়, তখন এই শহরের পুরনো আওয়াধী অলিগলিগুলোতে এক অদ্ভুত মিষ্টি সুবাস ভেসে বেড়াতে শুরু করে। এটি কোনো বিলাসবহুল দোকানের কেনা মিষ্টির গন্ধ নয়, এটি হল আখের রস আর চালের সেই আদিম মিতালি— ‘রসাওয়াল’। যুগ বদলেছে, ব্যস্ততা বেড়েছে, কিন্তু আওয়াধের ঐতিহ্যের ইতিহাসে রসাওয়ালের মিষ্টত্ব আজও অমলিন।
‘কিস্সে লখনউ কে’ ধারাবাহিকের ২১তম পর্বে হোম শেফ রক্ষাণ বেগ অত্যন্ত আবেগঘন কণ্ঠে তুলে ধরেছেন এই হারানো দিনের কথা। তাঁর মতে, রসাওয়াল শুধু একটি খাবার নয়, এটি ছিল লখনউয়ের শীতের রাতের এক পারিবারিক উৎসব। রক্ষাণ স্মরণ করেন, “বাবার মালিহাবাদের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে বিশাল এক মাটির হান্ডিতে করে রসাওয়াল আসত আমাদের বাড়িতে। সেই স্বাদ যেন আজও আমাদের জিভে লেগে আছে।”
ধৈর্যের শৈল্পিক স্বাদ
রসাওয়াল তৈরি করা ছিল এক কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা। মাটির উনুনে সারারাত ধরে জাল দেওয়া হতো আখের টাটকা রস। ধীর আঁচে ফুটতে ফুটতে সেই রস যখন ঘন হয়ে কালচে রঙ ধারণ করত, তখনই তাতে মেশানো হতো সুগন্ধি চাল। এরপর তাতে যোগ করা হতো নারকেল কুচি (গরি), যা এই খাবারের অন্যতম প্রধান উপকরণ। রক্ষাণ জানান, আভিজাত্য বাড়াতে তাতে মিশিয়ে দেওয়া হতো খোয়া, কাজু এবং বাদাম।
প্রতিটি পরিবারের এই মিষ্টি খাওয়ার ধরন ছিল আলাদা। কেউ গরম গরম রসাওয়ালের উপর কাঁচা দুধ ঢেলে দিতে পছন্দ করতেন, আবার কেউ পছন্দ করতেন এক চামচ ঠান্ডা মালাই। শীতের আমেজে সেই ধোঁয়া ওঠা বাটি হাতে বসার আনন্দই ছিল স্বর্গীয়।
আজকের ইন্সট্যান্ট খাবারের যুগে এই ধীর গতির ঐতিহ্য হয়তো ম্লান হয়ে আসছে, কিন্তু রক্ষাণ বেগের মতো মানুষেরা আজও সেই মাটির উনুন আর আখের রসের স্মৃতিগুলোকে সজীব রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত রসাওয়াল তো কেবল এক বাটি মিষ্টি নয়, এটি আওয়াধের সংস্কৃতির সেই অংশ যা আজও লখনউবাসীকে মাটির টানে ফিরিয়ে আনে।

